মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষক মেহরীন চৌধুরী, মাসুকা বেগম ও মাহফুজা খানম মানবতা ও সাহসিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে জাতির কাছে ‘চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার তিন শিক্ষকের স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এমন মন্তব্য করেন বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ হয়। সেখানে শিক্ষক মেহরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল, দুই ছেলে আদিল রশিদ ও আয়ান রশিদ, বোন মেহেতাজ চৌধুরী, ভাই মুনাফ মজিব চৌধুরী ও নিকট আত্মীয় কাওসার হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষক মাসুকা বেগমের স্বজনদের মধ্যে ছিলেন বোন পাপড়ি রহমান ও ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান। আরেক শিক্ষক মাহফুজা খাতুনের পরিবার থেকে এসেছিলেন মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকা, বোন মুরশিদা খাতুন, ভাগ্নে মো. মাইদুল ইসলাম ও আত্মীয় হুমায়ূন কবির।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন পার হলেও এই স্মৃতি এখনো সবার মধ্যে দগদগে হয়ে আছে। আমি ঘটনা জানামাত্রই আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা যে দুঃসময়ের মধ্যে ছিলেন, সে সময়ে দেখা করা সমীচীন হতো না। আমরা আপনাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করতে পারি, কিন্তু এই দুঃসহ স্মৃতি মুছে দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে এটুকু বলতে পারি, এ শোক আপনাদের একার নয়। জাতি হিসেবে আমরা এই শোক ধারণ করি। এ সময় তিন শিক্ষক পরিবারের কাছে তাদের স্মৃতিকথা শুনতে চান প্রধান উপদেষ্টা।
শিক্ষক মেহরীন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, তাকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল, তখন ফোনে আমার সঙ্গে কথা হয়। সেদিন বার্ন ইনস্টিটিউটে যে দৃশ্য দেখেছি, তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। জীবনে যেন কারো সেই অভিজ্ঞতা না হয়। আমি তাকে দেখলাম, একপাশ পুরোটা পুড়ে গেছে। সেখানে কয়েকজন সামান্য দগ্ধ বাচ্চা চিকিৎসা নিতে নিতে আমাকে বলল, ‘মিসই আমাদের টেনে টেনে বের করে আনল! মিস তো সুস্থ ছিল! এমন হলো কেন! আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি বের হয়ে এলে না কেন? তোমার নিজের দুই সন্তানের কথা একবারও ভাবলে না?’ সে আমাকে বলল, ‘ওরাও তো আমার সন্তান। ওদের একা রেখে আমি কী করে চলে আসি?’ পৃথিবীর সব মানুষ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে তার জন্য দোয়া করেছে। সবার জন্যই সে নিবেদিতপ্রাণ ছিল।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তাদের কথা শুনতে কষ্ট লাগে। একই সঙ্গে গর্ববোধ হয় যে আমাদের দেশে এমন নাগরিক আছে, যারা অন্যের জীবন বাঁচাতে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে। মানবতার এ দৃষ্টান্ত তারা প্রমাণ করে গেছে। আমরা ক্ষুদ্র মানব ছিলাম, তারা আমাদের বড় করেছে। সবার ভেতরে নাড়া দিয়েছে। সবাই এটা নিজের মধ্যে অনুভব করেছে যে, আমি যদি সেই অবস্থানে থাকতাম, আমি কী করতাম? আমি কি জীবনের পরোয়া না করে এভাবে ছোট শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে আত্মবিসর্জন দিতাম?’ এ প্রশ্ন সবার মনে এসেছে।