ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

পাঙাশের দাম আকাশে ক্রেতার মুখ ফ্যাকাসে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০২:০৪ এএম

মানুষের প্রাণিজ আমিষের বড় উৎস মাছ। তবে বাজারে অধিকাংশ মাছের দাম চড়া হওয়ায় ক্রেতাদের বিকল্প আস্থা পাঙাশ। তবে বিকল্প হিসেবে সস্তায় পাঙাশ খাওয়ার সেই সুযোগও হারাচ্ছেন ক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঙাশের আকাশচুম্বী দামের কারণে ক্রেতাদের মুখও ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করেছে। একই সঙ্গে বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করলেও, ফের বেড়েছে অন্যান্য সবজির দাম। বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে প্রায় প্রতিটি সবজিই গড়ে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

বাজারে যে মাছগুলো দীর্ঘ সময় ধরে ‘সস্তা’ বলে পরিচিত ছিল, তা এখন দামি হয়ে উঠেছে। তার মধ্যে পাঙাশ অন্যতম। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের (ডিএএম) তথ্য মতে, তিন বছর আগে পাঙাশের দাম ছিল ১১০ টাকা। যা এখন প্রতি কেজি ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঙাশের মতো তেলাপিয়া, চাষের কই, রুই, কাতলাসহ অন্যান্য মাছের দামও অনেকটাই বেড়েছে।

মাছের বিকল্প হিসেবে নি¤œআয়ের মানুষ ডিম বা ব্রয়লার মুরগি থেকে পুষ্টি নেবে, সে উপায়ও নেই বললেই চলে। কারণ, মাছের মতোই বেড়েছে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম। গরু ও খাসির মাংসের দাম তো বছর বছর বাড়ছে। বেড়েছে দুধের দামও।

সরেজমিন রাজধানীর নিউমার্কেট, নওয়াবগঞ্জ, হাজারীবাগসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোতে ঘুরে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে বেগুন প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, গাজর (দেশি) ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ টাকা, মুলা ৭০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, শিম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, ফুলকপি পিস ৮০ টাকা, দেশি শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বাঁধাকপি পিস ৭০ টাকা এবং প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ও লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বেড়েছে মাছের দাম। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়ার কারণে মাছ চাষি থেকে শুরু করে পাইকারি বিক্রেতাÑ সবাই লোকসান আছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। চাষের পাঙাশ কেজি ২৩০ থেকে ২৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০, মাঝারি সাইজের কৈ মাছ ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা, দেশি শিং ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে ইলিশের দাম এখনো সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এক কেজির বেশি ওজনের বড় ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম ওজনের ওপরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়।

এ ছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকায়। প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৩০ টাকায়। 

এদিকে আমদানি বাড়ায় বাজারে গত কয়েক সপ্তাহে কমেছে চালের দাম। বর্তমানে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৮-৮০ টাকায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৭৫-৮০ টাকায়, ব্রি-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, পাইজাম ৫৮-৬০ টাকা কেজি। স্বর্ণা ও গুটি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৪ টাকা কেজি দরে।

এ ছাড়া বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। রসুন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, দেশি আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর নওয়াবগঞ্জ বাজারে কেনাকাটা করতে আসা লতিফা আক্তার লতা বলেন, বাজারে ১০০ টাকার নিচে ভালো কোনো সবজি পাওয়া যায় না। আমাদের মতো নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য চাহিদামতো মাছ-মাংস ও সবজি খাওয়া কষ্টকর। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজির দাম বেড়েছে।