ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

যশোর বিমানবন্দরে অনিয়ম দুর্নীতি যেন থামছেই না

মাইনুল হক ভূঁইয়া ও দেলোয়ার হোসেন
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০২:১৩ এএম

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের যশোর বিমানবন্দরে অনিয়ম-দুর্নীতি যেন থামছেই না। টেন্ডার, অনিয়ম-দুর্নীতি, কার পার্কিংয়ে নিজেরা স্টিকার ছাপিয়ে তা ব্যবহার করে গাড়ি প্রবেশ করানো, তেল চুরি, কাজ না করেই বিল উত্তোলন, ঠিকাদারি কাজে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার, কর্মরত প্রকৌশলীরা মিলেমিশে ঠিকাদারি কাজ করা, কোয়ার্টার বরাদ্দে অনিয়ম, কেরানি সামাদের দৌরাত্ম্য, প্রকৌশলী কাজি বায়েজিদকে বার বার বদলির পরও যশোরেই বহালসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত যশোর বিমানবন্দর। দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের অভিযান, দুই ম্যানেজারকে ঢাকায় বদলি, নতুন ম্যানেজার নিয়োগের পরও দুর্নীতি থামছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখানে ‘গোপালগঞ্জ সিন্ডিকেট’ সক্রিয় রয়েছে। বিমানবন্দরের বদলীকৃত দুই ম্যানেজারের বাড়ি গোপালগঞ্জ বলে জানা যায়।

বিমানবন্দরের সাবেক ম্যানেজারের সঙ্গে আনসার সদস্য হাসিনার সম্পর্ক নিয়ে এখানে নানা গল্প চাউর হয়েছিল। ওই ম্যানেজারের স্ত্রীও তা আঁচ করতে পেরে একদিন তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেন। বিমানবন্দরের সদ্য বদলীকৃত ম্যানেজার সহকারী পরিচালক এ টি এম সায়েদুর রহমানও দুর্নীতিমুক্ত যশোর বিমানবন্দর গড়তে পারেননি। তার গায়েও দুর্নীতির তকমা লেগেছে বিধায়Ñ তাকে বদলি করা হয়েছে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর উপপরিচালক (এটিএম) যোগেশ চন্দ্র কর্মকারকে যশোর বিমানবন্দরে বদলি করা হয়েছে। তার মূল পোস্টিং কক্সবাজার বিমানবন্দর হলেও তাকে যশোরে সংযুক্তি করে আয়ন-ব্যয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সহকারী পরিচালক প্রশাসন তিরান হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে।

এদিকে অকেজো মালামাল নিলামে বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় যশোর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদক। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালিত হয়। 

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লি¬ষ্ট সূত্র জানায়, তিন সদস্যবিশিষ্ট ওই টিমের মধ্যে দুজন ছিলেন উপসহকারী পরিচালক। তারা হলেনÑ উপসহকারী পরিচালক চিরঞ্জীব নিয়োগী ও উপসহকারী পরিচালক কৃষ্ণ পদ বিশ্বাস। 

সূত্র জানায়, দুদকের কাছে অভিযোগ ছিলÑ বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোন রোড থেকে উত্তোলিত অকেজো মালামাল (ইট, পাথর ইত্যাদি) নিলামে বিক্রিতে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে মালামাল বিক্রি না করে চতুর্থ দরদাতার কাছে অকেজো মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। সর্বোচ্চÑ অর্থাৎ প্রথম হওয়া ঠিকাদারের দেওয়া দর ছিল ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার কাছে এমনকি পরের আরও দুই দরদাতাকে ডিঙিয়ে চতুর্থ দরদাতার কাছে মালামাল বিক্রির অনুমোদন দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চতুর্থ দরদাতার দেওয়া দর ছিল ১০ লাখ টাকা।

অভিযানকালে ওই কার্যালয়ে ব্যবস্থাপকের দেখা পাননি দুদক কর্মকর্তারা। তিনি ঢাকায় রয়েছেন বলে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক (সহকারী পরিচালক) দুদক কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।

দুদকের ওই টিমের উপসহকারী পরিচালক চিরঞ্জীব নিয়োগী জানান, যশোর বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকের কার্যালয় থেকে তাদের জানানো হয়েছেÑ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দরদাতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে ত্রুটি ছিল। এ কারণে যথাযথ কাগজপত্র থাকায় চতুর্থ দরদাতার কাছে মালামাল বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে কর্মরতরা দুদক কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক বাতিল হওয়া দরদাতাদের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।

তাদের বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপক যশোরে ফিরলে ওই তিন ঠিকাদারের কাগজপত্র দুদককে সরবরাহ করা হবে। দুদকের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিলামে ওঠা মালামাল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তারা সংশ্লি¬ষ্ট ঠিকাদারের লোকজনকে মালামাল নিয়ে যেতে দেখেছেন।

কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের মনে হয়েছে মালামাল নিলামের ক্ষেত্রে অনিয়ম ছিল। তবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দরদাতার কাগজপত্র হাতে পেলে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। 

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে যশোর বিমানবন্দরের নানামুখী অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। তবুও প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম-দুর্নীতি কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। 

সার্বিক বিষয়ে যশোর বিমানবন্দরের একটি প্রকল্পে কর্মরত প্রকৌশলী এনামুল কবির রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমি সিভিল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। তবে মূলত যশোর বিমানবন্দরে ছোট একটি নিলাম নিয়ে সব ঘটনার উৎপত্তি। বিএনপি ঘরানার একটি ছেলে জট পাকাচ্ছে। এই নিলামে ছয়টি দরপত্র জমা পড়ে। সে প্রথম নিম্নদরপত্রদাতা হওয়া সত্ত্বেও তাকে কাজ না দেওয়ায় সে দুদকসহ সর্বত্র অভিযোগ করছে। আসলে তার কোনো কাগজই নেই।