ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দুর্গোৎসবে আনন্দমুখর সাগরকন্যা কক্সবাজার

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন,  কক্সবাজার
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০২:১৮ এএম

শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। উৎসব ঘনিয়ে আসতেই নগরীর বিভিন্ন বিপণিবিতান, শপিংমল ও হাটবাজারে বেড়েছে মানুষের ভিড়, চলছে কেনাকাটার ধুম।

উৎসবে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপণিবিতানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটায় জমজমাট পুরো শহর।

দুর্গোৎসব ঘিরে বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্রসৈকত বসেছে প্রাণের মেলা। বালিয়াড়ি থেকে শুরু করে নোনাজল সবখানে মানুষ আর মানুষ। এসব মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে মেতেছে আনন্দ-উল্লাসে। তাতে, সাগরতীর পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে। প্রশাসন বলছে, পর্যটক ও পূজার ভক্ত-দর্শনার্থীদের নির্বিঘœ চলাচল নিশ্চিত করতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে।

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে পর্যটনের রাজধানী কক্সবাজারের বিপণিবিতানগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নতুন পোশাক, অলঙ্কার, প্রসাধনী, খেলনা থেকে শুরু করে গৃহসজ্জার সামগ্রী পর্যন্ত কিনছেন ক্রেতারা। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। কেউ কিনছেন শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি বা জুতো, আবার কেউ ব্যস্ত উপহারসামগ্রী বেছে নিতে।

ক্রেতারা বলছেন, পূজার বড় একটা আনন্দের অংশ কেনাকাটার মধ্যে। শুধু পর্যটন শহরেই নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও কেনাকাটা করতে আসছেন ক্রেতারা। পুজোর কেনাকাটায় শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই নয়, কেনাকাটায় অংশ নিচ্ছেন সব ধর্মের মানুষ। ফলে পুরো পর্যটন শহরটি যেন এক উৎসব নগরীতে রূপ নিয়েছে।

উৎসবকে ঘিরে এমন ভিড় ব্যবসায়ীদের অর্থনীতির চাকা ঘুরেছে। বিক্রেতারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের মতে, দুর্গোৎসব উপলক্ষে ক্রেতাদের স্রোত বেড়েই চলেছে। কক্সবাজারে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকেরাও স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে উৎসবের আনন্দ ভাগ করছেন কেনাকাটার মাধ্যমে। এতে খুশি ব্যবসায়ীরাও।

বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনে চাঙ্গা সাগরপাড়ের ব্যবসা। সাগরপাড়ের ফটোগ্রাফার থেকে শুরু করে বার্মিজ পণ্যের দোকান সবখানে যেন ব্যস্ততার শেষ নেই।

দুর্গোৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে পুজোর আনন্দে ভোজনরসিকদের মন ভরাতে ব্যবসায়ীরা সাজিয়ে তুলছেন নানা রকম সুস্বাদু আয়োজন। মিষ্টির দোকান ভরে উঠছে নাড়ু, গজা, লাড্ডু থেকে শুরু করে রকমারি ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক খাবারে। ভক্তি আর আনন্দের সঙ্গে খাবারের এ বাহার যেন উৎসবকে আরও রঙিন ও প্রাণবন্ত করে তুলছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতি সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, পর্যটন দিবস, সাপ্তাহিক আর দুর্গাপূজার ছুটিতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেল, মোটেল আগাম বুকিং হয়ে গেছে। প্রতিমা বিসর্জনের দিন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের আগমন আর ব্যবসা ভালো হওয়ার আশা করছেন তিনি।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের অ্যাডিশনাল ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, দুর্গাপূজা উদযাপন, প্রতিমা বিসর্জন ও পর্যটকের আগমন ঘিরে কক্সবাজারে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুরো এলাকা থাকবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তার চাদরে আচ্ছাদিত।

তিনি আরও বলেন, পর্যটক ও পূজার ভক্ত-দর্শনার্থীদের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সৈকত এলাকায় টহল জোরদার করার পাশাপাশি প্রতিমা বিসর্জনের দিন বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। পর্যটক হয়রানি রোধে সতর্ক থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশ। 

শারদীয় রঙে রাঙানো কক্সবাজার এখন শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। কেনাকাটা, আড্ডা, আর উৎসবের আনন্দে মুখরিত এ শহর হয়ে উঠেছে এক অনন্য বৈচিত্র্যের প্রতিচ্ছবি।