ঢাকা শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাবর-তানভীরের মানাসলু জয়

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ০২:২০ এএম

পৃথিবীর অষ্টম শীর্ষ পর্বত মানাসলু জয় করলেন দুই বাংলাদেশি বাবর আলী ও তানভীর আহমেদ।
গতকাল শুক্রবার ভোরে তারা পৌঁছে যান মানাসলু পর্বত শীর্ষে। এই দুজনের সঙ্গে গাইড হিসেবে আছেন বীরে তামাং এবং ফুর্বা অংডি শেরপা। ‘মাউন্টেন অব দ্য স্পিরিট’খ্যাত এই চূড়ার অবস্থান নেপালের মানসিরি হিমাল রেঞ্জে।
আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার মানাসলুতে এভারেস্টজয়ী বাবর আলী আরোহণ করলেন অক্সিজেন ছাড়াই। এটি বাবরের চতুর্থ আটহাজারি শৃঙ্গে সফলতা। আর নিজের প্রথম কোনো আট হাজারি পর্বতে অভিযানে গিয়ে সফল হয়েছেন তানভীর আহমেদ।

‘মানাসলু অ্যাসেন্ট: ভার্টিক্যাল ডুয়ো’ শীর্ষক এই অভিযানের আয়োজক পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স।
এই অভিযানের আউটফিটার ‘স্নোয়ি হরাইজন ট্রেক্স অ্যান্ড এক্সপিডিশন’র স্বত্বাধিকারী বোধা রাজ ভান্ডারির বরাতে দুজনের চূড়ায় আরোহণের তথ্য দিয়েছেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সভাপতি ফরহান জামান।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অষ্টম শীর্ষ পর্বত মানাসলুতে একই দিনে দুইবার উড়ল আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ নিতে অভ্যস্ত বাবরের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া আটহাজারী শিখর আরোহণের। উচ্চতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার পর আমরা চূড়ান্তভাবে ঠিক করি যে এই মানাসলুই হবে কাক্সিক্ষত সেই চেষ্টার পর্বত। আজ (গতকাল) প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বাবর আলী কৃত্রিম অক্সিজেন সহায়তা ছাড়াই আরোহণ করেছে এই আটহাজারী শৃঙ্গ।’

অপর পর্বতারোহী তানভীরের এটি প্রথম আটহাজারী অভিযান জানিয়ে ফরহান জামান বলেন, ‘ইতিপূর্বে আটহাজারি শিখরে সফল সব বাংলাদেশি পর্বতারোহীই পর্বতারোহণের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রাপ্ত। এ থেকে অনেকের ধারণা ছিল, অতি-উচ্চ পর্বতে সফলতা পেতে বিদেশে গিয়ে মাউন্টেনিয়ারিং কোর্সের বিকল্প নেই। এ ধরনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তানভীরের নেই। ওর সম্বল দেশে সীমিত সুবিধার মধ্যে অনুশীলন আর ইচ্ছাশক্তি। তাই মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স-সংক্রান্ত ওই ট্যাবু আমরা ওকে দিয়ে ভাঙতে চেয়েছি। দুজনের কঠোর পরিশ্রমের ওপর আমরা আস্থা রেখেছি এবং দুজনেই আজ সফল হয়েছে। একজন করেছে অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া সামিট এবং অপরজন দেশে শিখেই সফল হয়েছে।’

তানভীর ও বাবর বাংলাদেশ থেকে নেপালে পৌঁছান ৫ সেপ্টেম্বর। প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে ৭ সেপ্টেম্বর তারা কাঠমা-ু থেকে গাড়িতে যান তিলচে গ্রামে। এরপর পাঁচ দিন হেঁটে তাঁরা পৌঁছে যান বেসক্যাম্পে।
সেখানে দুই দিন বিশ্রাম তারা শুরু করেন উচ্চতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া। প্রথম দফা ক্যাম্প-১ (৫৭০০ মিটার) এ এক রাত কাটিয়ে তারা নেমে আসেন। এক দিন বিশ্রামের পর দ্বিতীয় দফা আরোহণে তানভীর ক্যাম্প-২ (৬৩০০ মিটার) এবং বাবর ক্যাম্প-৩ (৬৭০০ মিটার) এ রাত কাটিয়ে শেষ করেন উচ্চতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব।

এরপর একদিন বেসক্যাম্পে বিশ্রামের পর আসে চূড়ান্ত চেষ্টার ক্ষণ। তানভীর ২২ সেপ্টেম্বর বেসক্যাম্প থেকে যাত্রারম্ভ করে উঠে আসেন ক্যাম্প-১ এবং পরদিন উঠে আসেন ক্যাম্প-২।

এদিকে বাবর একদিন পর রওনা দিয়ে সরাসরি উঠে আসেন ক্যাম্প-২-এ। ২৪ সেপ্টেম্বর দুজনেই ক্যাম্পে রাত কাটিয়ে পরদিন দুপুর নাগাদ পৌঁছে যান ক্যাম্প-৪-এ (৭৪০০ মিটার)।

বাকি সময় বিশ্রাম নিয়ে রাত নামতেই শুরু হয় তাদের পরম আরাধ্য চূড়ার দিকে যাত্রা। আর ২৬ সেপ্টেম্বর ভোরেই তারা পৌঁছে যান পর্বত শীর্ষে।

‘ভিএফ এশিয়া বাংলাদেশ’র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত তানভীর কিশোরগঞ্জ সদরের খরমপট্টি এলাকার আইনজীবী তাহের উদ্দিন আহমদ ও শিরীন আহমেদের প্রথম সন্তান। তানভীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ২০০৬ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।

আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে ডিগ্রি অর্জনকারী বাবর আলী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নজুমিয়া হাটের লেয়াকত আলী ও লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। বাবর ইতিমধ্যে এভারেস্ট, লোৎসে, অন্নপূর্ণাসহ বেশ কিছু সফল অভিযান করেছেন।

তাদের মানাসলু অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন সামুদা, ভিজুয়্যাল নিটওয়্যারস, গিগাবাইট বাংলাদেশ, চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন, সিনোভেস্ট, সিয়েরা-রোমিও, আদিবা ফুটওয়্যার, ফোরএস অ্যাডভান্স টেকনোলজিস, জেনোভার্স, সোর্স অ্যাসোসিয়েটস, আইলেট ব্যাংকার্স, কাজী অ্যাগ্রো ও ফ্রিয়েসভা।