রিপ ভ্যান উইঙ্কল বা কার্ল কার্ৎজ, তাদের একজন আমেরিকান আরেকজন জার্মান। দু’জনেই ঘুমিয়ে ছিলেন একটানা। জেগে উঠে দেখেছিলেন তাদের জীবনের ২০ বছর হয়েছে পার। তবে কল্পকাহিনি ছাড়াও এমন আরেকজন আছেন, যিনিও নিখোঁজ ছিলেন ৩০ বছর। কিন্তু বদলাননি একটুও।
শুনতে অদ্ভুত হলেও পূর্ব রোমানিয়ার বাকাউ অঞ্চলে এমন ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে গবাদিপশুপালনকারী এক কৃষক হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। ১৯৯১ সালে ভাসিল গর্গস নামে ৬৩ বছর বয়সি এক কৃষক তার খামার এবং গবাদিপশুর দেখভালের জন্য বেরিয়েছিলেন। তিনি মাঝেমধ্যেই সেখানে যেতেন, ফলে তার ট্রেনের টিকিটও কিনেছিলেন এবং তার পরিবারকে বলেছিলেন যে তিনি এক বা দুই দিনের মধ্যে ফিরে আসবেন। কিন্তু এর পর যা ঘটেছিল তা রহস্যই রয়ে গিয়েছে।
বলা হয়ে থাকে, ভাসিল গর্গস আর বাড়ি ফিরে আসেননি, ফলে পুলিশ এবং গ্রামবাসীরা যৌথভাবে তল্লাশি চালায়। ট্রেনে তল্লাশি চালানো হয়, আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়, কিন্তু ৩০ বছর ধরেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধীরে ধীরে পরিবার বিশ^াস করতে শুরু করে যে ভাসিল আর কখনো ফিরে আসবেন না, কেউ কেউ তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা সভার আয়োজনও করেন। কেউ আশা করেননি যে তিনি ফিরে আসবেন, কিন্তু একদিন ঠিক সেই অলৌকিক ঘটনাই ঘটে।
তিন দশক পর, ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায়, হঠাৎ ভাসিলের বাড়ির সামনে একটি গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে যিনি বেরিয়ে আসেন, তিনি ভাসিল ছাড়া আর কেউ নন। আশ্চর্যজনকভাবে তার পরনে ছিল ১৯৯১ সালে সেই পুরনো পোশাক যা পরে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তার পকেটে সেই তিন দশকের পুরনো ট্রেনের টিকিট ছিল, যা তিনি ব্যবহারও করেনি। যখন তার পরিবার জিজ্ঞাসা করে, এত বছর তিনি কোথায় ছিলেন, তখন ভাসিল শুধু এটুকু উত্তর দেন, ‘আমি বাড়িতে ছিলাম।’ আরও আশ্চর্যজনকÑ এই ৩০ বছরেও তার বয়স খুব একটা বাড়েনি, চেহারায় তার কোনো ছাপ নেই।
ডাক্তারদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, ভাসিলের বয়স ৯৩ বছর, তবুও তিনি তার বয়সের তুলনায় সুস্থ ছিলেন। স্মৃতিশক্তি হ্রাস ছাড়া কোনো গুরুতর অসুস্থতা ছিল না। তিনি শৈশব, পরিবার, খামার এবং ১৯৯১ সালের আগের জীবনের কথা স্পষ্টভাবে মনে রেখেছিলেন, কিন্তু ১৯৯১ সালের পরের ৩০ বছর তার জন্য এক অন্ধকারের মতো ছিল, যা তিনি একেবারেই মনে রাখতে পারেননি। তার হঠাৎ ফিরে আসা পরিবার এবং প্রতিবেশীদের হতবাক করে দিয়েছিল, সত্যি বলতে তারা ভয় পেয়েছিলেন। কীভাবে কেউ ৩০ বছর ধরে নিখোঁজ থাকার পরে ফিরে আসতে পারেন, যেখানে তিনি কোথায় আছেন বা তিনি কী করেছেন, তা কেউ জানেন না।
কেউ কেউ বিশ^াস করেন যে তিনি হয়তো তার বাবা-মা এবং সন্তানদের ছেড়ে অন্য জীবনযাপন করেছিলেন, হয়তো কারাগারে অথবা অন্য দেশে। কিন্তু তার পুরনো পোশাক এবং ট্রেনের টিকিট কীভাবে একই রয়ে গেল? যে গাড়িতে করে তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন, লোকেরা তাকে সেই গাড়িটি সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল, কিন্তু এটি এত দ্রুত চলে যায় যে কেউ তার নম্বর প্লেট দেখতে পায়নি। সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে এই প্রসঙ্গে টাইম ট্র্যাভেলের কথা তুলছে, আবার কেউ কেউ প্যারালাল ওয়ার্ল্ডের তত্ত্ব খাড়া করতে চাইছে। তবে, ভাসিলের সঙ্গে ঠিক কী যে হয়েছিল, সেই সত্যটি এখনো অজানাই রয়ে গিয়েছে।

