অবশেষে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে প্রকাশিত খবরই সত্য হলো। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের অগ্রনায়ক, জুলাইযোদ্ধা ড. নাসরিন সুলতানা লাকীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিতর্কিত ভিসি ড. আলিমুল ইসলামের প্রশাসন। গত ২৪ নভেম্বর দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে ড. লাকীকে বায়োবীয় ও ‘মিথ্যা’ অভিযোগ দাঁড় করিয়ে বরখাস্তের সব আয়োজন চলছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর আসাব উদ-দৌলা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
বিষয়টিকে অন্যায়, ভিসির অনৈতিকতা ও অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বলে মন্তব্য করেছেন ড. নাসরিন লাকী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বরখাস্তপত্রে প্রফেসর ড. নাসরিন সুলতানা লাকীর অপরাধ হিসেবে তার সহকর্মী অনিমেষ চন্দ্রের দাখিল করা শিক্ষা কার্যক্রমে অসহযোগিতা বিষয়ক অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধ সংক্রান্ত কমিটি থেকে তাকে অব্যাহতির পরও দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ আনা হয় যে, ‘নারী শিক্ষিকাকে হয়রানি’র অভিযোগ এনেছিলেন ড. লাকী নিজেই। বরখাস্তপত্রে ড. লাকীর অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশাসন সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এসব অভিযোগ একজন সিনিয়র প্রফেসরকে সাময়িক বরখাস্ত করার মতো নয় উল্লেখ করে বলেন, মূলত ভিসি আলিমুল ইসলামের প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বিরুদ্ধপক্ষকে শায়েস্তা এবং শিক্ষা দেওয়ার জন্যই বলির পাঁঠা বানিয়েছেন ড. নাসরিন সুলতানাকে। যিনি ভিসির অন্যায়, দুর্নীতি এবং অনৈতিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
ড. লাকী তার বিরুদ্ধে অন্যায় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ও ইউজিসি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি এ নিয়ে উচ্চ আদালতে বিচারপ্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন রূপালী বাংলাদেশকে।
তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাময়িক বরখাস্তের সত্যতা স্বীকার করলেও রেজিস্ট্রার আসাব উদ-দৌলা কোনো মন্তব্য করেননি। ভিসি আলিমুল ইসলামের বক্তব্যের জন্য একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত সোমবার অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সিন্ডিকেট বৈঠক ডাকেন ভিসি। সেখানে সিন্ডিকেট সদস্য সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারসহ আরও ২-৩ জন সদস্য সশরীরে উপস্থিত থাকলেও কয়েকজন অনলাইনে বৈঠকে অংশ নেন। সে বৈঠকে ড. লাকীর প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। বেশির ভাগ সদস্য এ বিষয়ে ভিসিকে আর না এগোনোর পরামর্শ দিলেও তাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে এককভাবে ড. লাকীকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেন। ড. নাসরিন লাকী জাতীয়তাবাদী চেতনার শিক্ষক হিসেবে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকে ‘সিলেট সরকারি ভেটেরিনারি কলেজকে’ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেওয়ার বিষয়ে প্রভাবিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সেই নাসরিন সুলতানা লাকীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দেওয়ার খবর বুধবার ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রকাশ্যে ভিসির এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এটি প্রতিষ্ঠানের নামে ভিসির ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটানোর অভিযোগ করেন। ড. লাকীর অভিযোগ, তাকে অপসারণ করতে ভিসির প্রশাসন বায়বীয় অভিযোগ, মিথ্যা ডকুমেন্টস, ভুয়া প্রমাণ তৈরি করেছেন, যার সঙ্গে বাস্তব সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম ফায়েজ বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

