ঢাকা বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

আধুনিক পদ্ধতিতে ভুট্টা চাষ

সম্ভাবনার সোনালি ফসল

মিনহাজুর রহমান নয়ন
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০১:২৫ এএম

বাংলাদেশে ভুট্টা এখন আর শুধু পশুখাদ্য বা পোল্ট্রি ফিডের উপকরণ নয়Ñ এটি হয়ে উঠছে খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প ও অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় ফসল। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভুট্টা একটি সহনশীল ও লাভজনক ফসল। আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভুট্টা চাষে কৃষকরা তুলনামূলক কম খরচে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারেন।

মাটির ধরন ও জমি নির্বাচন

ভুট্টা চাষের জন্য দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও পানি নিষ্কাশনযুক্ত উর্বর মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটির ঢ়ঐ মাত্রা: ৫.৫-৭.৫, জমিতে পানি জমে থাকলে চাষের উপযুক্ত নয়। তাই উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি বেছে নিতে হবে।

সঠিক সময়

রবি মৌসুমে (শীতকাল): ভুট্টা চাষের জন্য সর্বোত্তম সময়

বপনের সময়: অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি।

উন্নত জাত: বাংলাদেশে বিভিন্ন উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাত সহজলভ্য। যেমন:

ইঅজও ঐুনৎরফ ইযঁঃঃধ-৯-উচ্চফলনশীল, পশুখাদ্য উপযোগী, ঘক ৪০ তাপ সহনশীল, দ্রুত বর্ধনশীল, চরড়হববৎ ৩০ঠ৯২-বড় গাছ, মোটা শিষ, চঅঈ ৯৯৯-খরা সহনশীল, উচ্চ ফলন।

জমি প্রস্তুতি

জমি ভালোভাবে চাষ করতে হবে যাতে মাটি ঝুরঝুরে হয়। ২-৩ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করতে হবে। প্রয়োজন হলে নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনা (বিঘা প্রতি)

সারের পরিমাণ

গোবর/কম্পোস্ট- ৫০০-৭০০ কেজি, ইউরিয়া-৩০-৩৫ কেজি, টিএসপি-২৫-৩০ কেজি, এমওপি-২০-২৫ কেজি, জিপসাম-১০ কেজি, জিংক সালফেট-২ কেজি। উল্লেখ: ইউরিয়ার অর্ধেক বপনের সময়, বাকি অর্ধেক ৩০ ও ৫০ দিনে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

বীজ বপন পদ্ধতি

বপনের আগে বীজ শোধন করতে হবে ছত্রাকনাশক দিয়ে। বপনের দূরত্ব সাধারণত সারি থেকে সারি: ২.৫ ফুট, গাছ থেকে গাছ: ৮-১০ ইঞ্চি, প্রতি গর্তে ১টি বা ২টি করে বীজ বপন করা যায়।

সেচ ব্যবস্থাপনা

ভুট্টা চাষে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ সময় সেচ প্রয়োজন:

বীজ গজানোর পর (১৫-২০ দিন), গুটি বাঁধার আগে (৩৫-৪০ দিন), ফুল আসার সময় (৬০-৬৫ দিন), শিষ পরিপক্ব হওয়ার সময় (৮৫-৯০ দিন) উত্তরাঞ্চলে প্রয়োজনে আরও এক-দুইবার সেচ দিতে হয়।

আগাছা ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা

বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে হাত দিয়ে আগাছা নিড়ানি দিতে হবে। সাধারণ রোগ: লিফ ব্লাইট, স্টেম বোরার, রুক্ষতা রোগ । প্রতিকার: ছত্রাকনাশক: ম্যানকোজেব, প্রোপিকোনাজল, কীটনাশক: সাইপারমেথ্রিন, কার্বোসালফান ব্যবহার করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ

সাধারণত বপনের ৯৫-১১৫ দিন পর ভুট্টা ফসল সংগ্রহ উপযুক্ত হয়। শীষের মোচা শুকিয়ে বাদামি হলে ফসল কাটার সময়। সংগ্রহের পর রোদে শুকিয়ে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

লাভজনকতা

সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি বিঘায় ২০-৩০ মণ পর্যন্ত ভুট্টা উৎপাদন হতে পারে।

বর্তমানে ভুট্টার বাজারদর ভালো, এবং পোল্ট্রি শিল্পে চাহিদা বাড়ায় এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও দিন দিন বাড়ছে।