ভারতের উত্তর প্রদেশের ভাভর বনাঞ্চল। সে বনে পশু, পাখিরা মিলেমিশে, হেসে, গেয়ে ভালোই সময় কাটাচ্ছিল। কেউ কাউকে আক্রমণ করত না, মেরে খেত না। কারণ তারা সবাই মিলে ওটস চাষ করত। তারা একটা চুলাও তৈরি করেছিল। সেই চুলায় সকাল, বিকেল দুবেলা খিচুড়ির মতো করে ওটস রান্না হতো। আর পশু পাখিরা সবাই মিলে বনের মাঝখানে মাদুর বিছিয়ে আনন্দ করে খাওয়া-দাওয়া করত। রাতের খাওয়া শেষে ময়ূর পাখি ও বাঁদর বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে নাচ দেখাত, কাঠবিড়ালি গিটার বাজাত আর কোকিল ও কাকাতুয়া মিলে ডুয়েট গান ধরত।
এভাবে আনন্দ করে তারপর তারা ঘুমাতে যেত। কিন্তু একদিন হলো কি, পাশের বন থেকে একটা প্রকা- আকৃতির হিংস্র বাঘ বনে ঢুকে পড়ল। সে এসেই বনের রাজা সিংহকে লড়াইয়ের আহ্বান জানাল। সিংহ তো লড়াই, যুদ্ধ অনেকদিন করেনি। তার অভ্যাস নেই। সে ভয়ংকর হিংস্র বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে গিয়ে বন থেকে পালিয়ে গেল। বাঘ তখন হুঙ্কার দিয়ে বলল, আজ থেকে আমি হলাম এই বনের নতুন রাজা। তারপর প্রতিদিন সে ইছোমতো নানা প্রাণী মেরে কচকচিয়ে মাংস চিবিয়ে খেত। পাখিদের বাসায় হামলা চালিয়ে তাদের ডিম খেয়ে ফেলত। বনের পশু-পাখিরা বাঘের অত্যাচারে একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। তারা একটা মিটিং ডাকল।
মিটিংয়ে আলোচনা চলতে লাগল কীভাবে বাঘের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ভিমরুল উঠে বলল, আমি যুদ্ধ করে বাঘকে পরাজিত করব। তোমরা আয়োজন কর। বাঘ তো সব শুনে রেগে আগুন। একটা পুঁচকে ভিমরুল করবে বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ! সে বানরকে বলল, কাল দুপুরে খোলা মাঠে যুদ্ধের আয়োজন কর। ভিমরুলকে এমন শিক্ষা দিব যেন বনের আর কোনো পশু-পাখি আমার ওপর চোখ তুলে তাকাতে সাহস না করে। পরের দিন দুপুরে সব পশু-পাখি মাঠে এসে স্টেডিয়ামের মতো গোল করে বসল। যথাসময়ে বাঘ ও ভিমরুল এসে হাজির হলো। তারপর শুরু হলো ভয়ংকর যুদ্ধ।
ভিমরুল বাঘের দিকে উড়ে আসতেই, বাঘ ভিমরুলকে লক্ষ্য করে মারল থাবা। কিন্তু ভিমরুল পলকের মধ্যেই সরে গেলে থাবার আঘাত এসে লাগল বাঘের গালে। বাঘের গাল কেটে রক্তাক্ত হয়ে গেল। বাঘ ব্যথায় চিৎকার করে উঠল। এই সুযোগে ভিমরুল বাঘের আরেক গালে বসে ভয়ংকরভাবে হুল ফুটিয়ে দিল। বাঘ হুলের বিষে চিৎকার করে আরেক গালে থাবা চালাতেই ভিমরুল সরে গেল।
আর থাবার আঘাতে বাঘের অপর গালটিও রক্তাক্ত হয়ে গেল। পরক্ষণেই ভিমরুলটি বাঘের পিঠে বসে হুল ফুটিয়ে দিল। বাঘ পিঠে থাবা মারতেই ভিমরুল সরে গেল। থাবার আঘাতে বাঘের পিঠের হাড় কড়াৎ করে ভেঙে গেল। বাঘ তখন কোনোমতে দৌড়াতে দৌড়াতে বন থেকে পালিয়ে গেল। ভিমরুলের যুদ্ধ জয়ে বনে সাতদিন ধরে উৎসব চলল। তারপর বনের পশু-পাখি আগের মতোই সুখে, শান্তিতে ও আনন্দে বসবাস করতে লাগল।