ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫, ১১:৩১ এএম
মাদক

মাদক শুধু একটি সামাজিক সমস্যা নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্বের জন্যও হুমকিস্বরূপ। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই মাদকের ভয়াল থাবা ছড়িয়ে পড়েছে। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে নানা বয়সি মানুষ এ ভয়ঙ্কর আসক্তির শিকার হচ্ছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, খুন, এমনকি পারিবারিক সহিংসতাও।

রূপালী বাংলাদেশে ‘সবজির মতো সর্বত্র মাদক’ শিরোনামের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বস্তিতে মাদক ব্যবসার ভয়াবহ বিস্তার এক বিপর্যয়ের নাম। রাজধানীর উপকণ্ঠে থাকা এ শহরটির ২২টি বস্তি ঘিরে গড়ে উঠেছে শতকোটি টাকার মাদকের সাম্রাজ্য। শুধু বস্তিবাসী নয়, সংশ্লিষ্টদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এই ভয়ঙ্কর চক্রের শেকড় ছড়িয়ে পড়েছে প্রশাসন, রাজনীতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও। যা শুধুমাত্র একটি সামাজিক ব্যাধি নয়, এটি এখন জাতীয় নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক গুরুতর হুমকি।

একটি রাষ্ট্র যখন তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তখন তার সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। গাজীপুরের বস্তিগুলোয় এখন মাদক পাওয়া যায় শাক-সবজির মতো। শিশু-কিশোরেরা ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ নানা নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার, অভিভাবকরা অসহায়। নিজ সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন তারা।

এসব মাদকের হাট নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় প্রভাবশালী নারী মাদক কারবারিরা, যাদের অনেকেই কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। বাড়ি, ফ্ল্যাট, প্রাইভেটকার, ট্রাক, এমনকি ভাড়া দেওয়া দোকানঘর সবই মাদকের টাকায় কেনা। অথচ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে এমন সাম্রাজ্য গড়ে উঠলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নজির নেই বললেই চলে। বরং অভিযোগ রয়েছে, পুলিশকে নিয়মিত ভাগ দিয়েই এই ব্যবসা নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

গাজীপুরের চিত্র সমগ্র দেশের শহরাঞ্চলের জন্য এক ভয়ঙ্কর সতর্কবার্তা। এখনই যদি এই অবস্থার উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে এই বিষবৃক্ষ সমগ্র সমাজকে গ্রাস করবে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালালেও মাদকচক্রের মূল শেকড় রয়ে যাচ্ছে অক্ষত। সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন চালান প্রবেশ করছে, আবার দেশের ভেতরেও গড়ে উঠছে গোপন উৎপাদনকেন্দ্র। কেবল খুচরা ব্যবসায়ী বা ক্ষুদ্র আসক্তদের গ্রেপ্তার করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। মাদকের পৃষ্ঠপোষক, অর্থায়নকারী ও শক্তিশালী সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় আনা জরুরি।

একইসঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণ কেবল দমনমূলক পদক্ষেপে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রয়োজন প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ। এই জন্য সামাজিক সসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে তরুণদের সম্পৃক্ত করা, পুনর্বাসন কার্যক্রম সম্প্রসারণ, এবং আসক্তদের চিকিৎসা সহজলভ্য করা। সমাজ ও পরিবারকেও দায়িত্ব নিতে হবে। সন্তানদের প্রতি নজরদারি ও সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হবে।

আমরা মনে করি,  রাষ্ট্র যদি কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে, তবে মাদকের ভয়াবহতা কমানো সম্ভব। এ লড়াই দীর্ঘমেয়াদি হলেও জরুরি, সেই সঙ্গে অনিবার্য। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে এখনই মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর, টেকসই ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তাই মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, বাস্তবে রূপায়ণ করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে।