ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখতে হবে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০২:২৫ এএম

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকা-, বিস্ফোরণ ও তথাকথিত দুর্ঘটনা এখন আর নিছক কাকতালীয় বলে মনে হচ্ছে না। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন, চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার রপ্তানি কারখানায় আগুন, মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে আগুনে ১৬ জনের প্রাণহানী,  আর এর ঠিক আগেই নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের শিল্পাঞ্চলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকা-Ñ সবগুলো ঘটনাই সময়, স্থান ও প্রভাবের বিচারে যেন এক অদ্ভুত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এসব ঘটনার ফলে কেবল কোটি কোটি টাকার ক্ষতিই হয়নি, ঝরেছে তাজা প্রাণ সেই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ, রপ্তানি বাণিজ্য ও দেশের ভাবমূর্তিও বড় ধাক্কা খেয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তা আরও উদ্বেগজনক। কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সচল থাকা সত্ত্বেও অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়েছে একেবারে অভ্যন্তরীণভাবে, যেন কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আবার কারখানার ভেতরে হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা গ্যাস লিকেজের নামে ঘটে যাচ্ছে বড় ধরনের বিস্ফোরণ। এসব ঘটনায় নাশকতার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, যা রাষ্ট্রবিরোধী চক্রের নতুন কৌশল বলেই অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত।

এই অগ্নিকা-ের ঘটনাগুলোর পাশাপাশি দেশে একাধিক নাশকতার ঘটনাও সামনে এসেছে। এসব ঘটনাও ইঙ্গিত দেয়, একটি শক্তিশালী চক্র দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এরা দেশীয় কোনো গোষ্ঠী, না কি বিদেশি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।

বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক সংকট পেরিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই দেশকে অস্থিতিশীল করতে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের লক্ষ্য স্পষ্ট, ভয় ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকারের উন্নয়নধারা বাধাগ্রস্ত করা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা এবং জনগণের আস্থা নষ্ট করা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে নানা অপপ্রচার, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানোর প্রচেষ্টা। কোথাও অগ্নিকা-, কোথাও হঠাৎ বিস্ফোরণ, আবার কোথাও ধর্মীয় উসকানি, সব মিলিয়ে যেন এক সুসংগঠিত ষড়যন্ত্র চলছে এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।

এখন সময় এসেছে দৃঢ় হাতে এই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার। অগ্নিকা-ের তদন্ত যেন শুধুমাত্র অবহেলা কিংবা দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা বলেই বিবেচিত না হয়। প্রতিটি ঘটনার পেছনে কারা, কী উদ্দেশ্যে, কোন গোষ্ঠীর নির্দেশে, তা উদ্ঘাটন করা জরুরি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও আরও তৎপর হতে হবে।  শিল্পাঞ্চল, বন্দর, কৌশলগত স্থাপনা ও সরকারি দপ্তরে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে, গুজব বা অপপ্রচারে কান না দিয়ে রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়াতে হবে। সংবাদমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে ভুল তথ্য বা আতঙ্ক ছড়ানো না হয়।

নতুন বাংলাদেশের এখন অনেকের চোখে গাত্রদাহের কারণ। যারা চায় না এই দেশ এগিয়ে যাক, তারাই নানা রকম কৌশলে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে।

একটি সভ্য জাতি তখনই নিরাপদ থাকে যখন এর সংবেদনশীল অবকাঠামো, জনগণ ও অর্থনীতি, এ সবকিছুকে রক্ষার জন্য শক্ত নীতিমালা ও কর্মদক্ষ সংস্থা গড়ে ওঠে। ষড়যন্ত্রকারী বাহ্যিক হোক বা অভ্যন্তরীণ, তাদের উদ্দেশ্যই থাকে অস্থিরতা তৈরি করে দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। তাই আমাদের প্রতিরোধও হতে হবে একই রকম দৃঢ়,  আইনসম্মত এবং জনগণের স্বার্থ-নির্ভর।

এই পরিস্থিতিতে, দেশের স্বার্থ ও গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করাই হোক আমাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য। যারা দেশের নাশকতা করে পরিবেশ বিঘিœত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনি, সামাজিক ও নৈতিকভাবে একযোগে লড়তে হবে। দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় আলোকসূর্যের মতোই আমাদের সদিচ্ছা জ্বলতে হবে; কারণ এই দেশ আমাদের, এ দেশের শান্তি ও অগ্রগতির বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ যাতে সফল হতে না পারে সেই প্রতিশ্রুতি আমাদের রাখতে হবে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই দেশ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার দেশ। ষড়যন্ত্র, আগুন, বা ভয় দেখিয়ে এই দেশকে থামানো যাবে না। আমাদের ঐক্য, দেশপ্রেম ও মুক্ত চিন্তার শক্তিই হচ্ছে এই জাতির সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তাই এখনই সময়, দেশের বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দাঁড়ানোর, তাদের মুখোশ উন্মোচনের, এবং জাতির নিরাপত্তা ও অগ্রগতির স্বার্থে সবাইকে এক কণ্ঠে বলার, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না।