# নির্মাণের ২৩ বছরেও সংস্কার করা হয়নি ঘরগুলো
# রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সুবিধাবঞ্চিত বাসিন্দারা
# জরাজীর্ণ হওয়ায় চরম দুর্ভোগে বাসিন্দারা
# ভাঙাচুরা ঘরে বাধ্য হয়ে দিনযাপন
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বৃষ্টি হলেই পলিথিন মুড়িয়ে রাত পার করেন এখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিএনপি সরকার ঘরগুলো নির্মাণ করায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ঘরগুলো সংস্কারের ছোঁয়া পায়নি। ফলে আবাসনের বাসিন্দারা বারবার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
জানা গেছে, ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের বলদীপুকুর আবাসন এলাকায় টিনশেড ঘর নির্মাণ করে। পরে ঘরগুলো সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বর্তমানে আবাসনের ঘরে ৩৮০টি পরিবার বসবাস করে। ঘরগুলোতে থাকেন ভিক্ষুক, দিনমজুর, অটোরিকশাচালক, ভ্যানচালক, খেতমজুর, আদিবাসী ও জেলেরা। নির্মাণের কয়েক বছর পর থেকে আবাসনের ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। তারপর দীর্ঘ ২৩ বছরে প্রকল্পের ঘরগুলোতে আর কোনো সংস্কারকাজ হয়নি। বর্তমানে এসব আবাসনের ঘরের অবস্থা খুবই নাজুক। জরাজীর্ণ হওয়ায় আবাসনের বাসিন্দারা রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। তারপরেও বাসিন্দাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় ভাঙাচুরা ঘরে কোনো রকমে দিনযাপন করছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নে ৩৮টি আশ্রয়ণের ব্যারাক রয়েছে। ব্যারাকের জরাজীর্ণ ঘরগুলোতে ৩৮০টি পরিবার বসবাস করছেন।
আবাসন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি আধাপাকা ও টিনশেড ঘরের প্রতিটি ঘরই জরাজীর্ণ। ঘরের ছাউনির টিন ফুটো হয়ে গেছে, আবার কোথাও কোথাও ছাউনি ভাঙা, দরজা নেই, টয়লেট ভাঙা, পানির জন্য প্রয়োজনীয় টিউবওয়েল নেই। অনেকেই টিনশেড ঘরগুলোর ওপরে পলিথিন বা ট্রিপল দিয়েছেন। তবুও বৃষ্টি হলে রক্ষা মেলে না এখানকার বাসিন্দাদের। বৃষ্টির পানি ভেতরে পড়ে ভিজে যায় ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিস ও আসবাবপত্র। বেশি বৃষ্টি হলেই ঘরগুলো পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়।
আবাসনের বাসিন্দা আনিছুর রহমান বলেন, ‘সবাই আইসে আর ছবি তুলি নিয়া যায়, কিন্তু হামার ঘরের টিন নাগায় না। ঝড়ি আসলে হামার ঘুম হয় না বাবা। কেউ হামার খবর নেয় না।’
গোলসেনারা বেগম বলেন, ‘বিএনপির সময় ঘর পাছি, তারপর আর কেউ খবর নেয় নাই। ঘর সরকারের, জমিও সরকারের। ধারদেনা করি যে ঘরগুলা ঠিক করমো তা-ও পারি না। হামার পাকে কেউ দেখে না বাবা।’
আরেক বয়োবৃদ্ধ করিমন্নেছা বেগম বলেন, ‘বেশি বৃষ্টি হইলে ঘরের কোনায় বা চকির নিচে থাকতে হয়। কখন বৃষ্টি কমবে, সেই আশায় পলিথিন মুড়িয়ে বসে থাকি, এটা কোনো জীবন। ঘরের বেড়ার টিনগুলোও এখন মরীচিকা ধরে ঝাঁজরা হয়ে গেছে। এখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এখন ঘরগুলো মেরামতের অবস্থায় নেই। তাই এই আবাসনের ঘরগুলো পুনর্নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
রানীপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু ফরহাদ পুটু বলেন, ‘আবাসনের বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বৃষ্টির সময় তাদের দুর্ভোগ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। উপজেলা মাসিক সভায় বিষয়টা আমি কয়েকবার তুলে ধরেছি; কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। খুব শীঘ্রই এখানকার ঘর ও রাস্তাটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে আবাসন প্রকল্পগুলোর কোনো কাজ হচ্ছে না। নতুন করে প্রকল্প আসলে এগুলো সংস্কার কিংবা নতুন ঘর নির্মাণ করা সম্ভব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনওর অতিরিক্ত দায়িত্ব) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, আবাসনের ঘরগুলো সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করার জন্য বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পেলে কাজ করা সম্ভব হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।