ঢাকা বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫

গুঁড়া দুধ খেতে বাধ্য হচ্ছে রোগী - যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

বিল্লাল হোসেন, যশোর
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৫, ০৭:৫৬ এএম

# গুঁড়া দুধ খেতে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন সেবিকারা
# মুখে খাবার খাওয়া রোগীকে দেওয়া হচ্ছে গুঁড়া দুধ
# কোম্পানি ও সেবিকাদের মাধ্যমে চলছে গুঁড়া দুধের বাণিজ্য
# সেবিকাদের চাপাচাপিতে বাড়তি টাকা খরচে বাধ্য হচ্ছে রোগী

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে গুঁড়া দুধের বাণিজ্য চলছে। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রের (প্রেসক্রিপশন) বাইরে রোগীর স্বজনদের হাতে সেবিকারা ইচ্ছামতো গুঁড়া দুধের প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিচ্ছেন। ভর্তি হওয়া যেকোনো রোগীকে গুঁড়া দুধ কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন, লেবার, গাইনি ও পেয়িং ওয়ার্ডে দুধের নাম লেখা স্লিপ দেওয়া হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব রোগী মুখে খাবার খেতে পারেন না বা শক্ত খাবার খেতে পারেন না, তাদের সাধারণত দুধ বা তরল খাবার খেতে দেওয়া হয়ে। কিন্তু জেনারেল হাসপাতালের অনেক রোগীর মুখে খাবার খাওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তাদের রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। তাদেরও দুধ খেতে দেওয়া হচ্ছে। এদিকে কোম্পানিভেদে প্রতি কৌটা দুধের দাম ৪০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা পর্যন্ত নেন দোকানিরা। সেবিকাদের চাপাচাপিতে অকারণে স্বজনদের দুধ কেনা বাবদ বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আনিকা জানান, গত ২ আগস্ট রাতে তার মাকে হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। ৪ আগস্ট রোগীর ছাড়পত্র দেন চিকিৎসক। এ সময় সেবিকাদের কাছে গেলে তার ছাড়পত্রের সঙ্গে ভিটাফ্যাটস নামে গুঁড়া দুধের প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেন। তার মা মুখে সব ধরনের খাবার খেতে পারলেও গুঁড়া দুধের প্রেসক্রিপশন দেখে তিনি অবাক হন।

একাধিক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, অসহায়ত্বকে পুঁজি করে দুধের স্লিপ দেওয়াসহ নানা প্রতারণা করা হয়। অনেক সময় রোগীর চিকিৎসাসেবার স্বার্থে তারা বুঝেও কোনো প্রতিবাদ করেন না। চিকিৎসকের নির্দেশনার বাইরে সেবিকারা কীভাবে গুঁড়া দুধের প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন, এটা তাদের বোধগম্য নয়।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গুঁড়া দুধের স্লিপ দেওয়ার বিষয়টি তার নজরেও এসেছে। তিনি এক দিন নিষেধও করেছেন সব রোগীকে দুধ কেনার স্লিপ না দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেবিকারা শুনছেন না। যেসব রোগী মুখে খাবার খেতে পারে না, তরল খাদ্য হিসেবে তাদের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তরল খাদ্যের বিষয়টি ব্যবস্থাপত্রে নোট থাকে। নিজেদের ইচ্ছামতো যদি কোনো সেবিকা রোগীর স্বজনদের দুধ কিনতে বাধ্য করেন, এটা অবশ্যই অনিয়ম।

রোগীর স্বজন আতিয়ার রহমান, জয়নাল আবেদীন, কুলসুম বেগম ও রোদেলা ইসলাম জানান, গুঁড়া দুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ওয়ার্ডে গিয়ে সেবিকাদের পাশে বসে থাকেন। তারাই নিজেদের কোম্পানির দুধের নাম লেখা ছোট কাগজ সেবিকাদের কাছে দিয়ে যান। সেবিকারা ওই দুধের প্রেসক্রিপশন ছাড়পত্রের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দেন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের বাইরে সেবিকারা গুঁড়া দুধ কেনার জন্য রোগীর স্বজনদের হাতে স্লিপ ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তিনি জানতেন না। এটা সত্যি হলে অনিয়ম। খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।