গত বছরের ডিসেম্বরে মাটি পরীক্ষার পর সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক এবার রড-সিমেন্ট আনা হয়। এতে চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করা স্থানীয়দের বুকে আশা জেগেছিলÑ এবার বুঝি দুর্ভোগ শেষ হবে। কিন্তু ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় আশা এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে। এ কারণে দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে চরাঞ্চলের মানুষের।
জানা গেছে, রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। অথচ একটি সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে জীবনযাপন করেন এখানকার মানুষ। ইউনিয়নের হিরু মোল্লার ঘাটে সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। বেশ কয়েকবার সেতু নির্মাণের আশ্বাসের পর অবশেষে গত বছরের ডিসেম্বরে মাটি পরীক্ষার পর সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু সেতুর কাজ শুরু না হওয়ায় বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে শুধু আশ্বাসে, কমছে না ভোগান্তি।
রতনদিয়া ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক অংশ (৩, ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) পদ্মার চরের ওপর অবস্থিত। এখানে তিনটি স্কুল, কয়েকটি হাট-বাজার রয়েছে। কয়েক হাজার পরিবার বসবাস করে। প্রতিদিন শত শত মানুষ হিরু মোল্লার ঘাট দিয়ে উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। মালামাল পরিবহন, ফসল আনা-নেওয়া, শিক্ষার্থীদের চলাচল ও অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের।
শুষ্ক মৌসুমে কোনোভাবে হেঁটে বা যানবাহনে পার হওয়া গেলেও বর্ষায় নৌকা ছাড়া বিকল্প থাকে না। এতে সময় ও অর্থ দুই দিক থেকেই ক্ষতির শিকার হন স্থানীয়রা। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, অসুস্থ ব্যক্তি ও প্রসূতিদের জন্য এ দুর্ভোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কৃষিপণ্য পরিবহনেও তৈরি হয় বড় সমস্যা।
নদী পার হওয়া স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল বেপারী বলেন, প্রতিবছরই বর্ষায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সেতু হবে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে আর কোনো খোঁজ মেলে না। এবার সেতু তৈরির জন্য রড-সিমেন্ট আনা হলেও কাজ শুরু হয়নি। কেন শুরু হয়নি, তা আমরা জানি না।
রোজিনা আক্তার নামে এক নারী যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেয়ে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। কষ্টটা বলে বোঝাতে পারব না। সেতু হলে চরের মানুষের দুর্ভোগ অনেকটাই দূর হতো।
এ বিষয়ে কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহুয়া আফরোজ বলেন, হিরু মোল্লার ঘাটে সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর পর প্রয়োজনের তাগিদে দুবার নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন বর্ষার কারণে কাজ করা সম্ভব নয়। শুষ্ক মৌসুমে দ্রুতই কাজ শুরু হবে।
তবে কর্তৃপক্ষের এই আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছে না চরাঞ্চলবাসী। তাদের দাবিÑ প্রতিশ্রুতি নয়, দ্রুত কাজ শুরু করে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটাতে হবে। একটি সেতুই পারে পদ্মার চরাঞ্চলের হাজারো মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে দিতে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন