ঢাকা মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫

পদ্মায় অবাধে ইলিশ শিকার

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

*** নিষেধাজ্ঞা অমান্য
*** বিকেল ও মধ্যরাতে ধরা হয় মাছ
*** পদ্মার তীরে প্রকাশ্যে ও গোপনে বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশ
*** ভারতের জেলেরাও বাংলাদেশের সীমানায় এসে মাছ ধরার অভিযোগ

ইলিশ প্রজনন মৌসুমে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত (২২ দিন) সারা দেশে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। আইন অমান্যকারীদের এক থেকে দুই বছরের সশ্রম কারাদ- অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান থাকলেও রাজশাহীর বাঘায় চলছে ভিন্ন চিত্র। পদ্মার তীরে বাঘা ও চারঘাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ও গোপনে মা ইলিশ ধরা ও বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, দুর্বল অভিযান ও প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় নিষেধাজ্ঞা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত রোববার পর্যন্ত ১৬ দিনে ৩ কেজি ইলিশ মাছ ও প্রায় ৪ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। তবে কোনো জেলেকে এখনো আইনের আওতায় আনা যায়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছেÑ ‘অভিযান চলছে, কিন্তু ফলাফল কোথায়?’

কিশোরপুর বাজার সংলগ্ন পদ্মার ঘাটে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনে নয়, রাতেই বেশি ইলিশ ধরা হয়। বিকেল ৩টা থেকে নদীতে জাল ফেলে সন্ধ্যায় জাল তোলা হয়, আবার মধ্যরাতে দ্বিতীয় দফায় শিকার শুরু হয়। ভোরে নৌকা ঘাটে নোঙর করলে জেলেরা মাছগুলো ঝোপঝাড়ে, কচুরিপানার নিচে বা বাড়িতে লুকিয়ে রাখে। সুযোগ বুঝে ভারতের জেলেরাও বাংলাদেশের সীমানায় এসে মাছ ধরছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লে স্রোতে ভেসে আসার দোহাই দিয়ে রক্ষা পাচ্ছে।

পদ্মায় জাল ফেলে যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে জাটকা ইলিশ বেশি। কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০শ টাকা, আধা কেজি ওজনের ১ হাজার ৫০০শ টাকা, ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের ৭০০ টাকা আর ১৫-২০টা কেজি এমন মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি দরে।

রোববার সরেজমিন দেখা যায়, বাঘার চকরাজাপুর, কালিদাশখালি, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, কিশোরপুর, আলাইপুর-মীরগঞ্জ নদীপাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে ও পিরোজপুর, রাওথা এলাকার পদ্মায় মা ইলিশ শিকার করছে জেলেরা। ইলিশ শিকার করে আসা ট্রলারগুলো সারিবদ্ধভাবে ঘাটে নোঙর করে আছে। নোঙর করা প্রতিটি ট্রলারের খন্দ (ট্রলারে মাছ সংরক্ষণ করার বাক্স) থেকে দু’তিনজন জেলে শিকার করা ইলিশ মাছ বের করে দিচ্ছেন। অন্য জেলেরা এই মাছ থেকে ছোট ও বড় ইলিশ পৃথক করে ঝুড়িতে তুলে দিচ্ছেন। এসব ঝুড়ি মাথায় করে গোপন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। জেলেরা বলেন, অন্য সময় এখানকার পদ্মায় ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পদ্মায় ডিমওয়ালা মা ইলিশ আর জাটকা ধরে বিক্রি করছেন।

হালিম নামে এক ক্রেতা বলেন, চারঘাটের পিরোজপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরার পথে আধা কেজি ওজনের ১টি মাছ কিনেছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে।

চকরাজাপুরের নিবন্ধিত জেলে ওয়ালিউর রহমান বলেন, এলাকার বেশিরভাগ জেলে মাধ ধরে সংসার চালান। মাছ না ধরলে পরিবার পরিজন নিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার যোগাতেই হিমশিম খেতে হয়। নিষিদ্ধ সময়ে মাত্র ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তহুরা হক বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যেই কিছু জেলে চুরি করে মাছ ধরে বিক্রি করছে। গত বুধবার (১৪-১০-২০২৫) আনুমানিক ২০০০(দুই) হাজার মিটার জাল ও  চকরাজাপুর বাজারে প্রকাশে বিক্রির সময় ৩ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার (০৭/১০/২৫) প্রায় ২০০০(দুই) হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়। জালগুলো পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে ও ইলিশ মাছগুলো মাদ্রাসা-এতিমখানায় দেওয়া হয়েছে। কাউকে দ- দেওয়া হয়নি। তার দাবি, এবার কমসংখ্যক জেলে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ শিকারে নেমেছে।