যশোরের মণিরামপুরে জিনিয়া প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাসেবার নামে মহাপ্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের টার্গেট করে সেখানে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছে। দালালের মাধ্যমে ভাগানো রোগীকে জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও হালনাগাদ লাইসেন্স ছাড়াই এক্স-রে ও প্যাথলজিক্যাল নিরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম চলছে। তবে ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষের দাবি, দালাল নয়, মার্কেটিং বিভাগে দায়িত্বরতরা মাঝেমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত জিনিয়া প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও ডক্টর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জিনিয়া প্যাথলজিক্যাল ল্যবরেটরিতে লিভারের পরীক্ষা (এসজিপিটি) করাতে যান আবুল হাসান নামে এক রোগী। পরীক্ষার পর ওই রোগীর লিভারের লেভেলের রিপোর্ট আসে ৮৩। অথচ লিভারের নরমাল লেভেল থাকে ৪২। ফলে রোগীর স্বজনদের সন্দেহ হওয়ায় যশোরের ইবনে সিনা হাসপাতাল থেকে একই রিপোর্ট করানো হয়। সেখানে রোগীর রিপোর্ট নরমাল আসে।
অভিযোগ উঠেছে, জিনিয়ায় দায়িত্বরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অর্থ বিশ্বাস আবুল হোসেনের মতো বহু রোগীকে এমন ভুল ও মনগড়া রিপোর্ট প্রদান করছেন। বুঝতে না পেরে সহজ-সরল রোগীরা ভুল রিপোর্ট অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে যাচ্ছে।
জিনিয়া ল্যাবরেটরিতে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উন্নতমানের কোনো যন্ত্রপাতি নেই। সেখানে প্যাথলজি পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। প্যাথলজিস্ট ছাড়াই অর্থ বিশ্বাস সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট রোগীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আবার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল ছাড়াই রোগীদের ইচ্ছামতো এক্স-রে করা হচ্ছে।
জিনিয়ায় ল্যাবরেটরিতে ব্যবসা জমজমাট করতে হামজা ও রফিকুল নামের দুজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগী ভাগাতে ব্যস্ত থাকেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীকে ভাগিয়ে ইচ্ছামতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে।
এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গড়ে ওঠা আরেক প্রতিষ্ঠান ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধেও অভিযোগের শেষ নেই। হালনাগাদ লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দালালের ওপর ভর করেই চলছে ডক্টরস ডায়াগনস্টিক। এখানকার নিয়োগকৃত দালালরা সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে এনে গলাকাটা বাণিজ্য করছে। প্যাথলজিস্ট ছাড়াই রোগীদের সরবরাহ করা হচ্ছে প্যাথলজি বিভাগের সব পরীক্ষার রিপোর্ট। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) রেজাউল ওরফে রেজা সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। তার রিপোর্টের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে জিনিয়া প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির মালিক মনিরুজ্জামান জনি বলেন, ‘এক্স-রে মেশিনের অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। প্যাথলজি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অর্থ বিশ্বাসের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামজা ও রফিকুল দালাল নন, তারা মালিকপক্ষের লোক। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে বাড়ি হওয়ায় পরিচিত রোগীদের ডাক্তার দেখানোর জন্য সেখানে তাদের যাওয়া পড়ে।
ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জাকির হোসেন জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট রেজার কাগজপত্র সঠিক আছে। রোগীদের সঠিক রিপোর্ট দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হয়। দালাল নয়, মার্কেটিং বিভাগে দায়িত্বরতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিজিটে যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফায়াজ আহমেদ ফয়সাল জানান, জিনিয়া প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, ডক্টরস ডায়াগনস্টিকসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগানোসহ নানা অনিয়ম শোনা যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, জিনিয়া প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে রোগীর ভুল রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে তদন্তে গিয়েছিলাম। কিছুদিন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এক্স-রে মেশিন স্থাপন করা আইনানুগ অপরাধ। এ ছাড়া জিনিয়া প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও ডক্টরস ডায়াগনস্টিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন