জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে ওঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি। আগাম সবজি বাজারে আসায় এসব সবজির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। একমাত্র আলুর দাম কম এছাড়া শীতকালীন সকল সবজি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। তবে চাষিরা বলছেন, আগাম চাষে সবজি উৎপাদান ব্যয় বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে বেশি দাম বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতা সাধারণের দাবি, আগাম বাজারে আসায় সবজির মূল্য মাত্রাতিরিক্ত বেশি। সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে আগাম সবজির বাজার।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, অল্প পরিমাণে হলেও বাজারে বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমোটো, গাজর, ধনিয়াপাতা, বরবটি, শিম, লাউ ওঠেছে। প্রতি কেজি আলু ১৫থেকে ২০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, প্রতি কেজি বাঁধাকপি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, প্রতি কেজি ফুলকপি ৮০ থেকে ১১০ টাকা, প্রতি কেজি টমেটো ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, ধানিয়াপাতা প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৫০টাকা থেকে ৬০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ২২০, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতিকেজি ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা ছাড়াও লাউ চড়া দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ উপজেলায় মোট কৃষি জমি ১৮ হাজার ৬৮৮ হেক্টর। তার মধ্যে চলতি বছর শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষমাত্রা এক হাজার ১৯০ হেক্টর। এ পর্যন্ত শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ৫৬০ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এ উপজেলায় সবজি চাষ হয় প্রায় প্রতিটি গ্রামেই। তার মধ্যে বাঘারচর, কাউনিয়ার চর, সানন্দবাড়ী, তারাটিয়া, ভাতখাওয়া, পাথরেরচর, রহিমপুর, আমখাওয়া, কাঠারবিল, সাপমারী, সবুজপুর, কলাকান্দা, বাহাদুরাবাদ, নাজিরপুর, ঝালরচর, বাহাদুরাবাদ, উৎমারচর, তিলকপুর, চরকালিকাপুর, চরবাহাদুরাবাদসহ অন্যান্য গ্রামে বেশি সবজি চাষ হয়।
চাষিরা জানিয়েছেন, চলতি শীতকালীন সবজি মৌসুম বা খরিপ-২ মৌসুমের কৃষি উপকরণের চড়া দাম। শ্রমিকের মজুরী থেকে শুরু করে সার-বীজ ও বালাই নাশকের চড়া দাম হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেশি পড়েছে। সে কারণে বাজারে সবজির মূল্য তুলনামূলক বেশি। তবে ভরা মৌসুমে দাম নেমে যাবে। তখন সকল সবজির দাম হাতের নাগালে আসবে।
পাথরেরচরের সবজি চাষি মো. আব্দুল জব্বার বলেন, চলতি বছর বর্ষা হয়নি। অধিকাংশ সবজি চাষিরা পরে বন্যা হবে ভেবে আগাম সবজি চাষ করেননি। তবে এ বছর আবহাওয়া সবজি চাষের অনুকূলে। ঝুঁকি ভেবেও যারা সবজি চাষ করেছিলেন তাদের সবজি বাজারে ওঠেছে। তার পরিমাণ অল্প। সে কারণেই বাজারে আগাম শীতকালীন সবজির দাম বেশি।
বাহাদুরাবদ কান্দিরগ্রামের গ্রামের সবজি চাষি আব্দুর রউফের ভাষ্য, বাড়ির পাশে চার বিঘা উঁচু জমিতে দুই বিঘা বেগুন আর এক বিঘা বাঁধাকপি আর এক বিঘা ফুলকপির চাষ করেছি। বেগুন ইতিমধ্যে বাজারে নিয়েছি। আগাম বাজারে নেওয়ায় দামও বেশি পাচ্ছি। দুই সপ্তাহ পরে আমার ক্ষেতের বাঁধাকপি ও ফুলকপি বাজারে নিতে পারবো। আশা করছি অন্যান্য বছরের তুলনায় দামও বেশি পাবো।
পৌর শহরের ক্রেতা নিপেন বর্মন জানান, আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে ওঠেছে। তবে প্রতিটি সবজির দাম অত্যন্ত চড়া। যা আমাদের সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে ক্রয় করা কষ্টসাধ্য। যারা কিনতে তারা খুব অল্প পরিমাণে কিনছে। আশা করছি অগ্রাহায়নের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাজার নেমে আসবে এবং যোগানও বাড়বে। তবে বাজারের চড়া দরে সাধারণ ক্রেতাগণ নাকাল।
কালিকাপুর এলাকার মাজম মাহমুদের ভাষ্য, রোববার বাজারে এসেছিলাম সবজি কিনতে। কিন্তু দাম দেখে হতাশ হয়েছি। প্রতিটি সবজির দাম কয়েকগুণ। সেই সাথে প্রতিটি সবজির গুনগত মান তেমন ভালো নয়। তবুও প্রয়োজনের তাগিদে কিনতে হচ্ছে। তবে সব সবজি বের হয়নি। বাজারে শুধু বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমোটো, গাজর, ধনিয়াপাতা, বরবটি সচরাচর পাওয়া যাচ্ছে। সবজির বাজারে এসে আমার মত অনেক ক্রেতাই হতবাক।
দেওয়ানগঞ্জ বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ওমর ফারুক বলেন, বাজারে প্রতিটি আগাম সবজির যোগান কম। সে কারণে প্রতিটি সবজির দাম বেশি। যোগান না বাড়লে সবজির দাম কমবে না। যোগান কম হওয়ায় পাইকারী বাজারেই প্রতিটি সবজির দাম বেশি। তাই বেশি দামেই আগাম সবজী বিক্রি করতে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন