চাকরি না ছেড়েই পালিয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় মৌলভীবাজারের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৮ শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তারা। এতে শিক্ষক-সংকটে ভুগছে জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত এই ৪৮ জন সহকারী শিক্ষককে পলায়নের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ৩৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে পলায়ন ও অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, যারা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, তাদের বড় অংশ নারী।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সাল থেকে বিভিন্নভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের। শিক্ষকেরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে প্রথমে ছুটি নেন। পরে তারা বিদেশে চলে যান। তখন সরকারিভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। যত দিন যাচ্ছে, এই সংখ্যা তত বেড়ে চলছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, জেলায় ১ হাজার ৬১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
এর মধ্যে সরকারি ১ হাজার ৫২টি। জেলায় কর্মরত প্রধান শিক্ষক ৭৭৬ জন। শূন্য পদ রয়েছে ২৭৪টি। এ ছাড়া এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ৫ হাজার ১৫৬ জন। সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ২২৩টি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকেরা দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় সংকট আরও বাড়ছে।
পতনঊষার বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা খানম বলেন, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ সায়মা আজিজ কোনো ছুটি ছাড়া বিদেশে চলে গেছেন।
শুনেছি, তিনি যুক্তরাজ্যে গেছেন। তার বদলে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শিক্ষক সংকট নিয়েই বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে মাইজগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস খান বলেন, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসরাত জেরিন প্রায় ১১ বছর চাকরি করেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটি নেন।
পরে শোনা যায়, তিনি বিদেশে চলে গেছেন। তার পরিবর্তে অন্য বিদ্যালয় থেকে একজন শিক্ষক দেওয়া হয়েছিল। তবে তিনি এখনো যোগদান করেননি। ফলে সংকট কাটছে না।
রাজনগর উপজেলার চাটুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাবেরী রানী দেব। তিনি ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত চিকিৎসার কথা বলে ছুটি নেন। নির্ধারিত ছুটি শেষ হওয়ার পর তিনি আর চাকরিতে যোগদান করেননি।
পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানতে পারেন, তিনি বিদেশে চলে গেছেন। বিষয়টি পরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়। ঠিক একইভাবে চাকরিচ্যুত শিক্ষকেরা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়ে আর আসেননি বিদ্যালয়ে।
এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন কমলগঞ্জের কাউয়ারগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমরজিৎ স্বর্ণকার, সতিঝিরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নোভা নাওয়ার, সদর উপজেলার আগনসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্যামলী খানম, মৌলভীবাজার সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তাহমিদা ইসলাম এবং রাজনগর উপজেলার চাটুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাবেরী রানী দেব।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, আমি যোগদান করার পর চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৯ জনকে পলায়নের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করেছি।
এ ছাড়া চারজনকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৮ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান। বেশির ভাগ শিক্ষক ছুটি নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তারা আর চাকরিতে ফিরতে পারবেন না।