জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার অভিযোগ করেছেন, তার ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘ঢাকা শহরের কিছু নির্বাচিত পার্ক ও বাগানে মশার পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক মৌলিক গবেষণাপত্র হুবহু নকল করে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ‘ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে মশার প্রজাতির বৈচিত্র্য’ শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে।
এই প্রবন্ধের লেখক ছিলেন জাতীয় জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (নিপসম) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম সারোয়ার এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ।
গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে জাবি শিক্ষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ এবং নিপসমের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. গোলাম সারোয়ারের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট নকল প্রবন্ধটি অবিলম্বে ‘প্রগ্রেসিভ এগ্রিকালচার’ সাময়িকী থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। একই সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় একাডেমিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া, সংশ্লিষ্টদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ বলেন, “গবেষণাপত্রে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আমি তা জানতাম না। জার্নাল থেকেও এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আমার এক পিএইচডি শিক্ষার্থী প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছে, যেখানে আমাকে না জানিয়ে সহলেখক হিসেবে নাম দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ঘটনাটি জানার পর ড. সারোয়ার আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।”
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপাচার্যের ব্যবহৃত ১৪ পৃষ্ঠার একাডেমিক সিভির ১১তম পৃষ্ঠায় বিতর্কিত প্রবন্ধটি যুক্ত ছিল। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও তার প্রোফাইলে এটি তালিকাভুক্ত ছিল। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর রবিবার রাতে সেটি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
২০১৭ সালে শেকৃবি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফের তত্ত্বাবধানে পিএইচডি সম্পন্ন করেন ড. মো. গোলাম সারোয়ার। পরে তিনি তার গবেষণাটি জার্নালে প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ২০ অক্টোবর (সোমবার) বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সারোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অধ্যাপক লতিফের অনুমতি ছাড়াই আমি তার নাম প্রবন্ধে যুক্ত করেছি। তিনি এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন না। এজন্য আমি নিঃশর্তভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের মতে, ঘটনাটি শেকৃবি কর্তৃপক্ষকে নৈতিকতার কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে।