ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় কোনো দ্বিমত নেই’

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ০৯:২৪ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রশ্নে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ।

সোমবার (২৬ মে) জাতীয় সংসদ ভবনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠনের প্রস্তাব, জুলাই অভ্যুত্থান ও ভোট জালিয়াতিতে অভিযুক্তদের বিচার এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দৃঢ় ঐকমত্য রয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও গণতন্ত্র’ যুক্ত করার পক্ষে বেশিরভাগ দল। তবে ‘বহুত্ববাদ’ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে।’

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠনের প্রস্তাবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। কিছু দল এককক্ষীয় ব্যবস্থার পক্ষেও মত দিয়েছে। তবে উভয় মতের দলগুলোই সংসদের ডেপুটি স্পিকার পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার পক্ষে।

নারীদের জন্য ১০০ আসন সংরক্ষণের প্রস্তাবে দলগুলোর মধ্যে আংশিক ঐকমত্য রয়েছে। তবে সংরক্ষণের পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত। তবে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য এবং সংসদে দলীয় শৃঙ্খলার ক্ষেত্র নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। অর্থ বিল, আস্থা ভোট ও সংবিধান সংশোধনের মতো বিষয়ে দলীয় অনুশাসন প্রযোজ্য হবে এ বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের সুপারিশকে অধিকাংশ দল সমর্থন করেছে। সরকারি সেবা ব্যবস্থায় অটোমেশন চালু করার প্রস্তাবে সর্বসম্মতি রয়েছে।

বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় গঠন এবং সাবেক বিচারপতিদের আচরণবিধি প্রণয়ন ও প্রয়োগের সুপারিশেও দলগুলো নীতিগত ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনে ‘ক্ষমা বোর্ড’ গঠন ও বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ক্ষমা প্রদর্শনের আইনি কাঠামো গঠনের প্রস্তাবও অধিকাংশ দল সমর্থন করেছে।

নির্বাচন কমিশনের জন্য পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব কমিশনের কাছে হস্তান্তর এবং রাজনৈতিক দলকে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আনার প্রস্তাব অধিকাংশ দল সমর্থন করেছে।

তবে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা সংক্রান্ত আইনি প্রস্তাবে দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

চারটি বিভাগকে প্রদেশে রূপান্তর, জেলা পরিষদ বিলুপ্তি, পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনে নতুন পদ্ধতি এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্তির মতো স্থানীয় প্রশাসনসংক্রান্ত প্রস্তাবে অধিকাংশ দল একমত হয়নি।

২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরপর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে কমিশনগুলো সুপারিশ জমা দেয়। ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক সংস্কার, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পুনর্গঠন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে আরও সংলাপ প্রয়োজন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।