মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে ঘটে গেছে তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। মিরপুরের শিয়ালবাড়ি, চট্টগ্রামের ইপিজেড এবং সর্বশেষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লাগা আগুন জনমনে প্রশ্ন তুলেছে- এসব নিছক দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত কোনো ষড়যন্ত্র?
বিমানবন্দরে আগুনে স্থবির কার্যক্রম
আ শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের মোট ৩৭টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এতে সহায়তা করে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, আনসার ও বিজিবি সদস্যরা।
আগুনে কার্গো ভিলেজের প্রায় সব মালামাল পুড়ে গেছে। ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চট্টগ্রাম, সিলেট ও কলকাতায় অবতরণ করে।
যাত্রীরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও আতঙ্ক ও অসুবিধায় পড়েন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রী টার্মিনাল ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস, সিভিল অ্যাভিয়েশন ও আনসারের অনেকে আহত হন। আনসার ও ভিডিপির গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকুজ্জামান জানান, এক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়, এদের মধ্যে ২৫ জন আহত হন। ৯ জনকে সিএমএইচে ও বাকিদের কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইপিজেডে কারখানায় আগুন
গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় অ্যাডামস তোয়ালে, ক্যাপ ও জিহং মেডিকেল সার্জিক্যাল গাউন তৈরির সাততলা কারখানায় আগুন লাগে। আগুন থেমে থেমে জ্বলার কারণে নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। ভেতরে দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
মিরপুরে প্রাণ গেল ১৬ জনের
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকার মিরপুর শিয়ালবাড়ি এলাকায় আনোয়ার ফ্যাশন পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১৬ জন। দগ্ধ হন অনেকে। টিনশেড গুদামে থাকা রাসায়নিকের কারণে আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ২৭ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
এ অগ্নিকাণ্ড ছিল রাজধানীর অন্যতম একটি ঘটনা। এদিন ঢাকার আকাশে ছেয়ে পড়েছিল ভয়াবহ বিষাদের ছায়ায়।
অগ্নিকাণ্ড নাকি ষড়যন্ত্র?
এই ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছে- এগুলো পরিকল্পিত ঘটনা কি না, কেবল সাধারণ কোনো অগ্নিকাণ্ড।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদন্ত ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয়, তবে এ ধরনের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে কারিগরি নিরাপত্তা, প্রশিক্ষণ ও মনিটরিংয়ের ওপর জোর দিতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে আগুনের কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।