পতিত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এই ১৬ বছরে ভালো-মন্দ মিলিয়ে সব কাজই ছিল তার ঝুলিতে। তবে এর বেশির ভাগ কাজই ছিল জনস্বার্থ পরিপন্থি। জনমত উপেক্ষা করে তিনি নিজের মতো দেশ পরিচালনা করতে চেয়েছেন। যে কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্বৈরাচারী।
এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশের একটি গণমাধ্যম।
প্রতিবেদনে গণমাধ্যমটি জানায়, পতনের ১১ মাসের মাথায় তার ভুলগুলো নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু দলের ভেতরে এ নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। আলোচনা থাকার কথাও নয়। কারণ দলটির ৪৫ হাজার নেতাকর্মী এখন ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গা ঢাকা দিয়েছে।
গত ১১ মাসে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথা বলেছেন হাসিনা। নিজের ভুলের জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পদে পদে ভুল করেছেন হাসিনা। সে ভুলগুলো কী-
১. গণতন্ত্রকে হত্যা ও বিরোধী মতকে দমন করা।
২. রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা।
৩. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা।
৪. নিজেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া।
৫. মানুষকে হেয় করা।
৬. ভারতের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল থাকা।
৭. তথাকথিত ভারসাম্যের নামে বন্ধুহীন হয়ে যাওয়া।
৮. টাকা লুট করা ও ভিনদেশিদের লুটে সহায়তা করা।
৯. নির্বাচনকে পকেটস্থ করা।
১০. বঙ্গবন্ধুকে আলাদা না করা।
১১. গুম-খুনকে ক্ষমতায় থাকার হাতিয়ার বানানো।
১২. সরকার ও দলকে এক করে ফেলা।
১৩. বিচার বিভাগকে নিজ কবজায় নেওয়া।
১৪. ব্যক্তিপূজায় নিজেকে সঁপে দেওয়া।
১৫. দেশের নিয়ন্ত্রণ অন্য শক্তির কাছে তুলে দেওয়া।
১৬. ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণে না রাখা।
এ ছাড়াও আরও অনেক ভুল ছিল তার। যার মধ্যে রয়েছে পরিবার তোষণ অন্যতম। পরিবারের বাইরের কাউকে বিশ্বাস করতেন না তিনি। যে কারণে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ৩ দিন আগেই এক খুদে বার্তা পাঠিয়ে সবাইকে দেশ ছাড়তে বলেছিলেন। ফলে তার কোনো আত্মীয় ধরা পড়েননি।
শেখ মুজিবকে পারিবারিক সম্পদে পরিণত করেছিলেন তিনি। যার ফলে তার পতনের সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিবও দৃশ্যপট থেকে বিদায় নেন।
জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল ‘২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা ও শাকিল বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করেন চিফ প্রসিকিউটর।
এই বক্তব্যের একটি অডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ফরেনসিক পরীক্ষায় সত্য বলে নিশ্চিত করে।
আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযুক্তদের ১৫ মে’র মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো জবাব না পাওয়ায়, ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরও তারা অনুপস্থিত থাকায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আদালতে উপস্থিতির আহ্বান জানানো হয়।
প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও শেখ হাসিনা কিংবা তার পক্ষে কোনো আইনজীবী হাজির না হওয়ায়, আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীকে তার পক্ষে নিযুক্ত করেন।
আইন অনুযায়ী, আদালত অবমাননার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, কিংবা উভয় দণ্ড দেওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এই শাস্তি কার্যকর করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :