ধামরাইয়ে একটি সম্ভাব্য বিয়ে ভাঙার খবরে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনার জন্ম হয়েছে। একটি ভাইরাল নাচের ভিডিও দেখে হবু কনের প্রতি পাত্রপক্ষের ‘অসন্তুষ্টি’ এবং এরপর বিয়ে বাতিল-এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই নানামুখী সমালোচনা শুরু হয়।
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাকে ঘিরে এই খবর, সেই তরুণী আদতেই ঘটনাটির সঙ্গে যুক্ত নন।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি ফেসবুক পেজে দাবি করা হয়, ধামরাইয়ের এক কলেজছাত্রীর ‘অশ্লীল ও দৃষ্টিকটু’ নাচের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পাত্রের বাবা ক্ষুব্ধ হয়ে বিয়ে ভেঙে দেন। সেই ভিডিওটিতে তরুণীকে দেখা যায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করতে।
পেজটিতে কথিত অডিও ক্লিপও প্রকাশ করা হয়, যেখানে এক পক্ষ আইনি হুমকি দিচ্ছেন এবং অপর পক্ষ সরাসরি বলেন, ‘আমাকে ফাঁসিতেও ঝুলাতে পারেন, তবু এমন যাত্রাপালার মেয়ে আমার ঘরে উঠবে না।’
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে এক তরুণীর ছবি ও নাম, যিনি স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী। অনেকেই তাকে বিয়েবিচ্ছেদের কেন্দ্রীয় চরিত্র বলে চিহ্নিত করতে থাকেন। ফলস্বরূপ, তরুণীকে ঘিরে নানা কটাক্ষ, মন্তব্য ও অপমান শুরু হয়।
ভাইরাল সংবাদের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একই ফেসবুক পেজ থেকে নতুন একটি পোস্টে জানানো হয়, তারা যে বিয়েবিচ্ছেদের কথা বলছে, সেটি ভাইরাল হওয়া মেয়েটির ঘটনা নয়। পেজ কর্তৃপক্ষ সরাসরি স্বীকার করে, ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও মেয়েটিকে নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, সেটি একেবারেই ভুল।
তারা অনুরোধ জানায়, মেয়েটির ছবি আর শেয়ার না করার এবং তাকে হেনস্থা না করার।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো, যাচাই না করে তথ্য ছড়ানো কতটা ভয়ংকর হতে পারে। একজন নির্দোষ তরুণী, যিনি কেবল একটি কলেজ অনুষ্ঠানে নাচে অংশ নিয়েছিলেন, তাকে ‘অশ্লীল’ তকমা দিয়ে সামাজিকভাবে হেনস্থা করা হলো। তার ছবি ও পরিচয় ছড়িয়ে দেওয়া হলো মিথ্যা ভিত্তিতে, যা একদিকে আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য, অন্যদিকে নৈতিক দিক থেকেও গর্হিত।
আইনজীবীরা বলছেন, এ ধরনের ভুল তথ্য প্রচার ও হেনস্থা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় স্পষ্ট অপরাধ। ভুক্তভোগী পরিবার চাইলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। অপরদিকে, তরুণীর সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ায়, এটি একটি মানহানির মামলা হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :