বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম

প্রতিবন্ধীসহ অর্ধশত লোকের জমানো টাকা নিয়ে উধাও সাবেক বিএনপি নেতা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম

ভুক্তভোগী নছু মিয়া ও স্থানীয়রা। ছবি- সংগৃহীত

ভুক্তভোগী নছু মিয়া ও স্থানীয়রা। ছবি- সংগৃহীত

ষাটোর্ধ্ব শারীরিক প্রতিবন্ধী নছু মিয়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভিক্ষাবৃত্তি করে কিছু টাকা জমান। বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হওয়ার পরপরই জমানো টাকাগুলো স্থানীয় এক বিএনপি নেতার মালিকানাধীন ইসলামিক মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামক একটি এনজিওতে জমা করেন।

বলা হয়েছিল, প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেবে। সেই লভ্যাংশের টাকায় প্রতিবন্ধী নছু মিয়া স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দুমুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বাকি জীবন কাটাবেন। কিন্তু আশার গুড়ে বালি। হঠাৎ করে এনজিওর মালিক বিএনপি নেতার মালিকানাধীন এনজিও অফিস বন্ধ। তালাবদ্ধ অফিস। খোঁজ নেই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। নছু মিয়া খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে মিয়ার উদ্দিন নামের ওই বিএনপি নেতা সব টাকা নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই সময়ে শুধু নছু মিয়ার নয়, এনজিওটির অর্ধশতাধিক গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হন বলে অভিযোগ রয়েছে ওই নেতার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী ষাটোর্ধ্ব নছু মিয়া উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদীঘি গ্রামের মৃত রহিম উদ্দিনের ছেলে।

অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম সিংগারদীঘি গ্রামের মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে। তিনি মাওনা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামিক মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের পরিচালক।

সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ভুক্তভোগী নছু মিয়া জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ভিক্ষাবৃত্তি করে জমানো টাকা ওই বিএনপি নেতা তার এনজিওতে জমা রাখতে উৎসাহিত করেন নছু মিয়াকে।

বলেন, প্রতি মাসে লাখে ২ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ দেওয়া হবে। আশ্বাস পেয়ে নছু মিয়া ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা করেন ওই এনজিওতে। কয়েক মাস লাভের টাকাও দেয় এনজিও থেকে। পাঁচ মাস পর হঠাৎ করে টাকা দেওয়া বন্ধ। এরপর খোঁজ নিতে যান নছু মিয়া। গিয়ে দেখেন অফিস বন্ধ। ফোনে যোগাযোগ হলে নম্বরও বন্ধ। সেই থেকে জমা রাখা টাকা ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় কেটে যায় এক যুগ। এক যুগ পর গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর দেশে ফেরেন বিএনপির নেতা সাইফুল। পরে নছু মিয়া জমা রাখা টাকা চাইতে যান তার কাছে। কিন্তু এখনো টাকা ফেরত পাননি।

নছু মিয়া বলেন, ‘ভবিষ্যতে একটু ভালোভাবে চলার জন্য দেড় লাখ টাকা তাকে দিছি। হঠাৎ করে গন্ডগোল করে দেশ ছেড়ে গেল। ১২ বছর চলে গেল। এখন দেশে আসছে। দেশে এসে বলে টাকা দিবে, কিন্তু দিচ্ছে না। শুধু আশ্বাস দিচ্ছে। আমি তার বাড়িতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা চাইলাম, তা-ও দেয়নি। খুবই কষ্টে দিনপাত করছি।’

নছু মিয়ার স্ত্রী বলেন, ‘টাকাগুলো দিছি ১২ বছর আগে। প্রথমে পাঁচ মাস লাভ দিছে। এরপর উধাও, কোনো খোঁজ-খবর নেই। স্বামী এখন অসুস্থ—হাঁপানি শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমিও অসুস্থ। তার বাড়িতে গেছি কয়েকবার। শুধু আশ্বাস দেয়।’

ভুক্তভোগী সয়েব আলী বলেন, ‘আমার সঞ্চয়কৃত ২ লাখ টাকা মাল্টিপারপাসে জমা রাখি। দুই মাস পর এনজিও বন্ধ। মালিক উধাও। আমার স্ত্রী ফুলবানু খুবই অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারছি না। এক যুগ পর বিএনপির নেতা দেশে ফিরলেও টাকা দিচ্ছে না। দেয়-দিচ্ছি করে ঘুরাচ্ছেন। জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিচ্ছেন।’

ভুক্তভোগী গ্রাহক মোনায়েম বলেন, ‘শাকসবজি বিক্রি করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা করেছি। ভাবছিলাম, লাভের অংশ দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারব। কিন্তু সবকিছু মাটি করল। বিদেশ থেকে দেশে আসার পর থেকে তার বাড়িতে শুধু ঘোরাফেরা করছি। কিন্তু টাকা পাইনি।’

অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার ২০১৩ সালে মাল্টিপারপাস শাখা অফিসগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কারণে সমস্যা হয়েছে। মাল্টিপারপাসের আমি একজন পরিচালক। প্রতিবন্ধী নছু মিয়ার সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান করব। পর্যায়ক্রমে আমি সব গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করব। মাল্টিপারপাসের নামে জমি রয়েছে। সেগুলো বিক্রি করে টাকা দিয়ে দিব।’

শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!