শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৫, ১০:২৯ এএম

কিডনির যেসব প্রাথমিক লক্ষণ কখনোই উপেক্ষা করবেন না

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৫, ১০:২৯ এএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি) এখন বিশ্বে মৃত্যুর নবম প্রধান কারণ। ল্যানসেটে প্রকাশিত ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের ২০২৩ সালের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর প্রায় পনেরো লাখ মানুষ কিডনি রোগে প্রাণ হারিয়েছেন।

গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ স্টাডি অনুযায়ী, বর্তমানে ২০ বছর বা ততোধিক বয়সী প্রায় ৭৮৮ মিলিয়ন মানুষ সিকেডিতে ভুগছেন। ১৯৯০ সালের তুলনায় সংখ্যাটি দ্বিগুণেরও বেশি। ধনী ও দরিদ্র, সব দেশেই কিডনির রোগী বাড়ছে; বিশেষত উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাদুর্ভাব বেশি।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ডেটাবেস বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে সিকেডি মৃত্যুর শীর্ষ দশ কারণের তালিকায় উঠেছে। প্রায় ১.৪৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু এবং ৮০০ মিলিয়ন মানুষের কিডনি কার্যক্ষমতা হ্রাসের পেছনে দায়ী এই রোগ। ১৯৯০ সালে বিশ্বে প্রায় ৩৭৮ মিলিয়ন মানুষ সিকেডিতে আক্রান্ত ছিলেন। তিন দশকে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণে।

গবেষণা বলছে, বিশ্বের অন্তত ১৪.২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কোনো না কোনো পর্যায়ের কিডনি বিকলতা রয়েছে। উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে বয়স-ভিত্তিক রোগের হার সবচেয়ে বেশি, এরপরই দক্ষিণ এশিয়া। জনবহুল দেশ হওয়ায় চীন ও ভারতের আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি; চীনে ১৫২ মিলিয়ন এবং ভারতে অন্তত ১৩৮ মিলিয়ন মানুষ সিকেডিতে ভুগছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিনটি প্রধান কারণে বিশ্বজুড়ে সিকেডির বোঝা বাড়ছে।

প্রথমত, মেটাবলিক রোগ বেড়ে গেছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অতিরিক্ত ওজন দীর্ঘ সময় ধরে কিডনির ক্ষতি করে।

দ্বিতীয়ত, আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিডনি স্বাভাবিকভাবেই কিছু কার্যক্ষমতা হারায়। ফলে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা যত বাড়ছে, সিকেডি তত বাড়ছে।

তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যসেবার অসম প্রাপ্যতা। অনেক দেশে এখনো কিডনি পরীক্ষার সুযোগ সীমিত, ফলে রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত হয় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সময়মতো পরীক্ষা, সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে সিকেডির বড় একটি অংশ প্রতিরোধযোগ্য।

কিডনি আমাদের শরীরের বর্জ্য ছাঁকন, তরল ভারসাম্য রাখা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ের কিডনি ব্যর্থতা প্রায়ই কোনো লক্ষণ দেখায় না। তাই অনেকেই বুঝতেই পারেন না যে কিডনির ক্ষতি শুরু হয়ে গেছে।

গবেষণা বলছে, কিডনি কর্মহীনতা শুধু কিডনি নয়, হৃদ্‌যন্ত্রকেও মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলে। বিষাক্ত বর্জ্য রক্তে জমা হতে থাকলে রক্তচাপ বাড়ে, শরীরে পানি জমে, এবং হৃদ্‌যন্ত্র অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যে প্রাথমিক লক্ষণগুলো কখনোই উপেক্ষা করা যাবে না

কিডনি রোগ শুরুর দিকে নীরব থাকে, তবে কিছু লক্ষণ সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখা দিতে পারে।

প্রস্রাবে পরিবর্তন, প্রস্রাবের পরিমাণ কমা বা বেড়ে যাওয়া, রাতে বারবার প্রস্রাবের চাপ তৈরি হওয়া। প্রস্রাব ফেনাযুক্ত বা রক্তমিশ্রিত দেখা গেলে তা বিশেষ সতর্কতার বিষয়।

পা, পায়ের পাতা, হাত বা চোখের নিচে ফোলা ভাব দেখা দিলে তা শরীরে পানি জমার ইঙ্গিত হতে পারে।
অস্বাভাবিক ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া, শরীরে চুলকানি, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, বমিভাব বা ক্ষুধামন্দা থাকলে কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা বুকে চাপ অনুভব করা রোগের আরও অগ্রসর অবস্থার সংকেত হতে পারে।

এই লক্ষণগুলোকে কখনোই বার্ধক্য বা ক্লান্তি ভেবে অবহেলা করা উচিত নয়। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে স্ক্রিনিং করানো জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সচেতনতা বাড়ানো ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে আগামী বছরগুলোতে সিকেডির বোঝা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। নিয়মিত কিডনি ফাংশন পরীক্ষা, যেমন জিএফআর বা ইউরিন অ্যালবুমিন টেস্ট, রোগটি প্রথম পর্যায়েই শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন কিডনি রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।

একই সঙ্গে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে সবাই বুঝতে পারেন যে কিডনি রোগ শুধু কিডনির নয়, হৃদ্‌রোগের অন্যতম বড় কারণও হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়তে থাকা কিডনি রোগ এখন একটি নীরব মহামারি। প্রাথমিক লক্ষণগুলো চিহ্নিত করে সময়মতো চিকিৎসা নিলে রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই এখনই দরকার সচেতনতা, পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!