মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিবিসি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৪:০১ এএম

শেখ হাসিনার ফাঁসি, পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ কী?

বিবিসি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৪:০১ এএম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ছবি- সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি- সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয় পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। অর্থাৎ মাত্র চার মাস সাত দিনের দিন সোমবার (১৭ নভেম্বর) এই মামলায় রায় হলো। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তবে এটি মামলায় আইনি প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ নয়।

এই মামলার গ্রেফতারকৃত আসামি ও অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পলাতক দেখিয়ে এই মামলার বিচার হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে গত বছর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হলে অক্টোবরে এই মামলাটি হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার এটিই প্রথম রায়। মামলাটিতে প্রথমে শেখ হাসিনাই আসামি ছিলেন। তবে এ বছরের মার্চে বাকি দুইজনকে এ মামলায় আসামি করা হয়।

সোমবার ট্রাইব্যুনালে ঘোষিত রায়ে বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

একইসাথে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত এবং আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। তবে এটি মামলাটির শেষ ধাপ নয়। এরপরে আরেও দুটি বিচারিক ধাপ রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রমাণিত হলে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল ট্রাইব্যুনাল। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। শাহবাগে লাগাতার বিক্ষোভ হয়, শাহবাগের এই বিক্ষোভের স্থান সে সময় গণজাগরণ মঞ্চ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

ওই সময় ১৯৭৩ সালের আইনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের উচ্চতর আদালতে আপিল করার সুযোগ ছিল না। পরে বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস করে। ফলে এখন দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালের রায়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন।

এই আইনের একটি ধারায় আপিল করার বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো অপরাধে ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত এবং দণ্ডিত হলে ওই ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দোষী সাব্যস্ত এবং ওই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। একইসাথে, সরকার অথবা অভিযোগকারীরও খালাসের আদেশ বা দণ্ডের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি পলাতক হলে তাকে আগে আত্মসমর্পণ করতে হবে। পরে তার আইনজীবী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, পলাতক ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করলে অথবা গ্রেফতার হলে আপিল করার আইনি অধিকার পাবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আইনি অধিকার পেতে হলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। অথবা তারা গ্রেফতার হলে আপিল করতে পারবেন। এছাড়া আইনে আপিলকারীকে সকল ধরনের নথি জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

আপিল বিভাগে দণ্ডিত ব্যক্তির আইনজীবী ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার অসঙ্গতি, ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয়টি তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার সুযোগ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় আপিল বিভাগ বহাল, পরিবর্তন বা বাতিলও করতে পারবে। রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করার বিধান রয়েছে ট্রাইব্যুনাল আইনে।

একইসাথে আপিল দায়ের করার ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে আইনে। সর্বোচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি হওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে আবার করা যাবে রিভিউ বা পুনর্বিবেচনার আবেদন। আপিল বিভাগেই এই আবেদন করা হয়।

শুনানি শেষে আপিল বিভাগ নিজেদের দেওয়া আপিলের রায়কে বহাল, সংশোধন বা পুনরায় শুনানির নির্দেশ দিতে পারে। আর এই রিভিউ আবেদন শুনানিই হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় বিচারিক প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল করে খালাস পাওয়ার নজিরও রয়েছে। জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় আপিলে বহাল থাকলেও রিভিউ আবেদন করে খালাস পান। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর আজহারুল ইসলামই প্রথম পুনর্বিবেচনার আবেদনের প্রেক্ষিতে খালাস পেয়েছেন।

তবে, রায় কার্যকরের আগে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির জীবন বাঁচানোর আরেকটি সুযোগ রয়েছে। সেটি হলো রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সাজা মওকুফের জন্য আবেদন করা। অর্থাৎ রিভিউ আবেদনেও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারেন। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ড মওকুফ, কমানো বা স্থগিত করতে পারেন।

সোমবার রায়ে সাজা দেওয়ার পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে জুলাইয়ে নিহত এবং ভুক্তভোগীদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত কীভাবে হবে এমন প্রশ্নে প্রসিকিউটর তামীম জানান, ট্রাইব্যুনাল রায়ে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্র বরাবর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

‘এখন সরকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের বিভিন্ন দফতর বা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যেমন এনবিআর বা অন্য সংস্থার মাধ্যমে রায়ের এই নির্দেশ সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে’ বলে জানান তামীম।

এদিকে, এই রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। রায়ের পর প্রকাশিত পাঁচ পৃষ্ঠার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিস্ক্রিয় করে দিতে’ অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পন্থা হচ্ছে 'তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া।’

ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এর আগে বিচারকে 'প্রহসন' বলে অভিহিত করেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের মার্চে তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। সবশেষ ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য পুনর্গঠন করে একই ট্রাইব্যুনাল। সেই ট্রাইব্যুনালেই বিচার হয়েছে শেখ হাসিনার।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!