গাজায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। শুক্রবারও (২১ নভেম্বর) অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার এই বাহিনী। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, এ বছর পশ্চিম তীরের তিনটি শরণার্থী শিবির থেকে ৩২ হাজার ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বহিষ্কার করে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে। ইসরায়েল দখলকৃত জায়গা আরও প্রসার ঘটিয়েছে।
তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’র আরও ৩০০ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে দখলদার বাহিনী। ফলে গাজাবাসীর জীবন এখন আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েল অন্তত ৪০০ বার এই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এর পরও ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে মেনে নেবে না। এমনকি সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণ অর্জনের বিনিময়েও তা মেনে নেবে না। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গাজায় ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ছিটমহলে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৮৮ জন আহত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৬৯ হাজার ৫৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ৭০ হাজার ৮৩৩ জন আহত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানায়, যুদ্ধবিরতির পর থেকে গাজায় অনুদান ব্যাপক হারে কমে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসকারী এবং অসুস্থতা, ক্ষুধা এবং অপুষ্টির সঙ্গে লড়াই করা দরিদ্র পরিবারগুলোতে এসব অনুদান পাঠান অনুদান সংগ্রহকারীরা। তেমনই এক ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ার মেগান হল। তিনি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ৯৫টি সহায়তা তহবিল চালান। যুদ্ধের সময় প্রতি সপ্তাহে প্রায় পাঁচ হাজার ডলার পাঠাতে পারতেন। এখন সেই অনুদান দুই হাজার ডলারে নেমেছে।
ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে রোমান যুগের ঐতিহাসিক স্থান দখলের পরিকল্পনা করছে। একটি সরকারি নথি অনুসারে জানা গেছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে রোমান যুগের প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সেবাস্তিয়ার বিশাল অংশ দখল করতে চাচ্ছে তারা। এই স্থানটি ১৮০ হেক্টর বা ৪৫০ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত।

সিঙ্গাপুর চারজন ইসরায়েলির ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে এবং তাদের দেশটিতে প্রবেশে বাধা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। তারা হলেন– মেইর মোর্দেচাই এটিঙ্গার, এলিশা ইয়েরেড, বেন-জিওন গোপস্টেইন এবং বারুচ মারজেল। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদের নিষিদ্ধ করে।
উত্তর গাজায় বহু ফিলিস্তিনি পরিবার ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থায় রয়েছে। দখলদার বাহিনী উপকূল ভূমির আরও ৩০০ মিটার গভীরে ঢুকে পড়েছে। এতে গাজাবাসীর জনজীবন আরও সংকুচিত এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
যুদ্ধাপরাধ করেছে ইসরায়েল
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের ‘অপারেশন আয়রন ওয়াল’ গত ২১ জানুয়ারি জেনিন শরণার্থী শিবিরে শুরু হয়। ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে চালানো এই বৃহৎ সামরিক অভিযান পরে তা তুলকারেম, নুর শামসসহ দখলকৃত পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলের আরও বেশ কিছু এলাকায় পরিচালিত হয়। এসব অভিযানের ফলে তিনটি শিবিরের প্রায় ৩২ হাজার বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়, যা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
প্রতিদিন হামলা চালাচ্ছে আইডিএফ
গতকালও অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের কাফর আকাব এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে দুই ফিলিস্তিনি কিশোর নিহত হয়েছে। খান ইউনিস শহরের দক্ষিণে তথাকথিত হলুদ রেখার বাইরে একজন বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিকে গুলি করা হয়।
গাজা শহরের পূর্ব অংশ থেকে মেশিনগান ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে প্রায়ই। বসতি স্থাপনকারীরা বেথলেহেমের কাছে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক এবং তাদের সম্পত্তির ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবারও একাধিক আক্রমণ হয়। তারা বাড়িঘর ও সম্পত্তিতে আগুন দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রাফায় পাঁচজন যোদ্ধাকে হত্যা করার দাবি করেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন