ঢাকা শনিবার, ০৩ মে, ২০২৫

রেকর্ড গড়া দিনে চমকে দিল মুম্বাই

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২, ২০২৫, ০৪:২০ পিএম
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। ছবি : সংগৃহীত

চলতি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মুম্বাইয়ের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন! টানা ছয় জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে এখন হার্দিক পান্ডিয়ার দল।

রাজস্থানকে বিধ্বস্ত করে এদিন মুম্বাই গড়ল একাধিক রেকর্ডও।

এ বছরের আইপিএলের শুরুটা মুম্বাইয়ের জন্য দুঃস্বপ্নের মতোই ছিলে। হার দিয়ে আইপিএলের মৌসুম শুরুর অভ্যাসটা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের পুরোনো। এবারও তার ব্যতিক্রম কিছুই হয়নি।

চেন্নাই সুপার কিংসের কাছে ৪ উইকেটে হেরে টানা ১৩ আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরে দলটি শুরু করল আসর।

প্রথম পাঁচ ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়ার পর যেন অবিশ্বাস্য এক রূপান্তর দেখাল আইপিএলের অন্যতম সফল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানস।

এরপরের ছয় ম্যাচে টানা জয় তুলে নিয়ে তারা এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে জয়পুরের সাওয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে রাজস্থান রয়্যালসকে ১০০ রানের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে শুধু প্লে-অফের দিকে একধাপ এগিয়েই যায়নি, সেই সঙ্গে একাধিক নতুন মাইলফলকও স্থাপন করেছে হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন দলটি। 

এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে রানের দেখা পাননি দুই ওপেনার। পাওয়ার-প্লের শেষদিকে ব্যাট চালানো শুরু করেন মুম্বাইয়ের দুই ওপেনার।

নির্ধারিত ২০ ওভারে ২ উইকেটের বিনিময়ে ২১৭ রানের পাহাড় গড়ে তারা। দলের হয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ওপেনার রায়ান রিকেলটন। তিনি ৩৮ বলে ৬১ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন।

রোহিত শর্মাও ৩৬ বলে ৫৩ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন। এ ছাড়া, সূর্যকুমার যাদব ও অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া প্রত্যেকেই ২৩ বলে ৪৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। ফলে দলীয় রান দুই শ পার হয়।

বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটাররা মুম্বাইয়ের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। জোফরা আর্চারের ৩০ রানের ইনিংস ছাড়া আর কেউই তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেননি।

শেষ পর্যন্ত ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। মুম্বাইয়ের বোলারদের মধ্যে ট্রেন্ট বোল্ট ও কর্ণ শর্মা প্রত্যেকেই ৩টি করে উইকেট শিকার করেন এদিন। 

এ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স বেশকিছু উল্লেখযোগ্য রেকর্ড গড়েছে।

টানা জয়ের হ্যাটট্রিক : চলমান আইপিএলে এটি মুম্বাইয়ের টানা ষষ্ঠ জয়। এর আগে তারা আরও দুটি আসরে টানা ছয়টি করে ম্যাচ জিতেছিল।

আইপিএলের ইতিহাসে এ নিয়ে তিনবার এমন কীর্তি গড়ল মুম্বাই। পরিসংখ্যান বলছে, এর আগে যখনই মুম্বাই টানা ৫ বা তার বেশি ম্যাচ জিতেছে, একমাত্র ২০০৬ সাল বাদে প্রতিবারই তারা ফাইনালের মঞ্চে উঠেছে।

দুঃস্বপ্নের লক্ষ্যও জয় : আইপিএলের ইতিহাসে যখনই মুম্বাইয়ের সামনে ২০০ বা তার বেশি রানের লক্ষ্যমাত্রা এসেছে, তারা প্রতিবারই জয়ী হয়েছে। এ নিয়ে ১৭টি ম্যাচে এমন পরিস্থিতিতে শতভাগ জয়ের এক অসাধারণ রেকর্ড নিজেদের দখলে রাখল হার্দিক পান্ডিয়ার দল।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, জয়টি জয়পুরে রাজস্থানের বিরুদ্ধে মুম্বাইয়ের প্রথম জয়। এর আগে ২০১২ সালের পর এ মাঠে রাজস্থানের বিপক্ষে খেলা চারটি ম্যাচেই পরাজিত হয়েছিল মুম্বাই।

শতরানের জয় : জয়টি আইপিএলের ইতিহাসে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের তৃতীয় বৃহত্তম রানের ব্যবধানে জয়। এর আগে ২০১৭ সালে দিল্লিকে ১৪৬ রানে এবং ২০১৮ সালে কলকাতাকে ১০২ রানে হারিয়েছিল তারা।

অন্যদিকে, রাজস্থান রয়্যালসের আইপিএলের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম পরাজয় (১০০ রান)। এর আগে বেঙ্গালুরুর কাছে তারা ১১২ রানে হেরেছিল।

চার তারকার ঝলক : গতকালের ম্যাচে মুম্বাইয়ের প্রথম চার ব্যাটসম্যানই ৪০ রানের গণ্ডি পেরিয়েছেন, যা আইপিএলের ইতিহাসে যৌথভাবে সর্বোচ্চ।

এর আগে চেন্নাই (২০১১), লখনৌ (২০২৩) এবং হায়দ্রাবাদ (২০২৪) এক ইনিংসে চার বা তার বেশি ব্যাটারের ৪০+ রানের ইনিংস দেখেছে।

জয়পুরের সর্বোচ্চ রান : জয়পুরের সাওয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে এটি সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ (২১৭ রান)। এর আগে ২০২৩ সালে হায়দ্রাবাদও এ মাঠেই রাজস্থানের বিপক্ষে ২১৭ রান করেছিল।

সূর্যের ধারাবাহিকতা : মুম্বাইয়ের তারকা ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব আইপিএলের ইতিহাসে টানা ১১টি ম্যাচে ২৫ বা তার বেশি রান করার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।

এ তালিকায় তার আগে রয়েছেন রবিন উথাপ্পা (১০টি), স্টিভেন স্মিথ, বিরাট কোহলি ও সাই সুদর্শন (প্রত্যেকের ৯টি)।

রোহিতের ৬০০০ : টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে বিরাট কোহলির পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে কোনো নির্দিষ্ট দলের হয়ে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন রোহিত শর্মা (৬০০৮ রান)।

বিরাট কোহলি বেঙ্গালুরুর হয়ে সর্বোচ্চ ৮৮৭১ রান করেছেন। এ তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা জেমস ভিন্স হ্যাম্পশায়ারের হয়ে ৫৯৩৪ রান করেছেন।

আসরের প্রথম দিকের ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের এ অভাবনীয় প্রত্যাবর্তন চলতি আইপিএলের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।