ঢাকা রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫

ইরানের ‘খায়বার’ ক্ষেপণাস্ত্র কেন এত ভয়ংকর?

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৫, ০৬:৫৬ পিএম
‘খায়বার’ ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি- সংগৃহীত

কোনো উসকানি ছাড়াই ইরানের ওপর ভয়াবহ বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা। টানা দশ দিনের এই সংঘাতের মধ্যে গতকাল রাতে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। জবাবে তেহরানের সবচেয়ে  শক্তিশালী ‘খায়বার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয় তেল আবিবের উদ্দেশে। এতে ইসরায়েলের অন্তত ১০টি অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রোববার (২২ জুন) ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলের ওপর সর্বশেষ হামলায় প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে ‘খায়বার’ ক্ষেপণাস্ত্র।

‘খায়বার’ কেন ভয়ংকর?

‘খায়বার’ ক্ষেপণাস্ত্রটি ইরানের সর্বশেষ প্রজন্মের মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অন্যতম। আনুষ্ঠানিকভাবে যার নাম খোররামশহর-৪। এটি দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত খোররামশাহর ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের চতুর্থ সংস্করণ।

এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা দুই হাজার কিলোমিটার এবং এটি এক হাজার পাঁচশত কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহনে সক্ষম। যা ইরানের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ভারী ওয়ারহেড বহনকারী অস্ত্র। তরল জ্বালানিচালিত এ ক্ষেপণাস্ত্রটি আকাশপথে উড়ন্ত অবস্থায়ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

এটির আরও একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো- এটি বায়ুমণ্ডলের বাইরে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাতের কৌশল সামঞ্জস্য করতে পারে। এর আগের ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর তুলনায় ‘খায়বার’ অনেক বেশি নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

প্রযুক্তিগতভাবে খায়বার ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ গতি বায়ুমণ্ডলের বাইরে প্রায় শব্দের গতির ১৬ গুণ (ম্যাক ১৬), আর বায়ুমণ্ডলের ভেতরে প্রায় শব্দের গতির ৮ গুণ (ম্যাক ৮)। এ কারণেই প্রচলিত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র আটকানো বেশ কঠিন।

এর আগে শুক্রবার (১৩ জুন) রাতের ঘটনা নিয়ে বর্তমান বিশ্বে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। ইসরায়েল হঠাৎ করেই ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়।

‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে পরিচিত এই অভিযানে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদর দপ্তরের কমান্ডার এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ, আরও দশজন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।

এর জবাবে ইরান গত শুক্রবার রাতেই ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামে পাল্টা অভিযান চালায়। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানে। এতে যদিও হতাহতের সংখ্যা কম, কিন্তু ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

চলমান এই সংঘাতের মধ্যে ২১ জুন রাতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ এবং ইস্পাহান— এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলা চালায়। এর ফলে এই যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।