দখল-দূষণ আর অবৈধ স্থাপনা তৈরি হওয়ায় সংকুচিত হয়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে প্রবহমান লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী খাল। কোনো কোনো স্থানে খালটি বর্জ্যরে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালের তলদেশ অপচনশীল প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরাট হয়ে গভীরতা কমে গেছে।
বাঁধ ও জাল দিয়ে মাছ শিকার এবং কচুরিপানায় ঢেকে থাকায় পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণেই গত বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির পানি ও ফেনী-নোয়াখালীর বন্যার পানিতে প্রায় দুই মাস রহমতখালীর দুই পারের বাসিন্দাদের পানিবন্দি থাকতে হয়েছিল।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রহমতখালী খালটি একসময় নদীর মতো প্রশস্ত ছিল। দেশের ছোট নদী হিসাবেও এর পরিচিতি ছিল। এ খালটির আয়তন প্রায় ৮৫ মাইল, প্রস্থ ছিল প্রায় ১৩০ মিটার ও গভীরতা ছিল প্রায় ৫২ ফুট।
তবে অধিকাংশ এলাকাতে খালটির প্রস্থ এখন ৩০ মিটারও নেই। ফেনী থেকে এ খালের শুরু, আর নোয়াখালী হয়ে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা ভেদ করে মজুচৌধুরীরহাট এলাকায় গিয়ে মেঘনা নদীতে মিলেছে খালটি।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানায়, রহমতখালী খালের ৮ কিলোমিটারই পড়েছে লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকায়। এ অংশে দখল, দূষণ এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করতে কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া আড়াআড়ি বাঁধ, কচুরিপানা, পানি প্রবাহে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এগুলো দূরীকরণে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।
সরেজমিন খালের লক্ষ্মীপুর অংশ ঘুরে ভয়াবহ দখল আর দূষণের চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর শহর, পৌর বাজার, মাদাম, ঝুমুর, জকসিন, মান্দারী, বটতলী ও চন্দ্রগঞ্জ বাজার অংশে খালের দুপাশে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। আর এসব বাজারের অংশে প্লাস্টিক বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণ ও ভরাটের চিত্র দেখা গেছে।
জেলা শহরের বাজার সংযোগ সেতু থেকে দুপাশে দাঁড়ালে খাল দখলের চিত্র স্পষ্ট দেখা যায়। পৌর বাজার, অবৈধ দখলদার, মসজিদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শৌচাগার দিয়েও অনেকাংশে খাল দখল করে রাখা হয়েছে।
খালপাড়ের বাসিন্দা বৃদ্ধ আব্দুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আবু তাহের ও রেজাউল করিম জানান, একসময় রহমতখালী খালে বড় বড় পণ্যবাহী নৌকা চলত। এখনো খালে স্রোত আছে, তবে আগের মতো নেই। আগে খাল ছিল নদীর মতো চওড়া ও পানিও ছিল পরিষ্কার। আর এখন অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে খাল সরু হয়ে পড়ছে।
তারা আরও বলেন, নিচু নিচু ব্রিজ করে খালের পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। একই কারণে এখন নৌকা চলাচল করতে পারে না। পানি কালো ও ময়লাযুক্ত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশা-মাছি, কীটপতঙ্গ জন্ম নিচ্ছে খালের পানিতে। এতে রোগবালাই বাড়ছে। এক সময় প্রচুর মাছ আহরণ হতো এ খাল থেকে, সেগুলো এখন ইতিহাস।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ বাংলাদেশের সভাপতি মো. শাহীন আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রহমতখালী খাল দখল এবং দূষণের কবলে পড়ে তার অস্তিত্ব হারিয়েছে। খালের দুই পাড়ে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, শিগগিরই জকসিন ও মান্দারী বাজার এলাকায় খাল পরিষ্কার ও অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। মান্দারী বাজারে খালের পাশেই একটি প্লট ব্যক্তিমালিকানায় খতিয়ানভুক্ত হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করতে হবে। এজন্য আপাতত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। সেখানে খাল পরিষ্কার করে পানি প্রবাহ সচল করা হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রহমতখালী খালে পানি প্রবাহ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ-জামান খান বলেন, রহমতখালী খাল ও ভুলুয়া নদী খননের লক্ষ্যে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষণ শেষে বরাদ্দের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে।
এ ছাড়া খাল অবৈধভাবে দখলকারীদের তালিকা প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে বলে রূপালী বাংলাদেশকে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ।