শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৪:৪১ এএম

১২০০ কোটি টাকা কর ফাঁকির দণ্ড ৬০০ কোটি

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৫, ০৪:৪১ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ গ্রাফিক্স

আওয়ামী সরকারের সুবিধাভোগী ইউনাইটেড গ্রুপ প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। গ্রুপের কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য প্রমাণিত হওয়ার দণ্ড হিসেবে আরও ৬০০ কোটি টাকা মিলে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা প্রদান করতে হবে। মাশুলসহ নির্ধারিত বকেয়া কর না দিলে কোম্পানির সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআার)।

একই সঙ্গে দেশের পরিবর্তিত সরকারব্যবস্থায় ১০ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব জব্দসহ ৩৫ সাংবাদিকের অর্থ পাচার ও আয়করসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চূড়ান্ত করেছে এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। সাংবাদিকদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ বকেয়া আয়কর প্রায় ৪ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। সাবেক প্রেস সচিব ও সিনিয়র সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান তার আয়কর হিসাবে কয়েক কোটি টাকা ফাঁকি দিয়েছেন, যে কারণে তার বিষয়ে নতুন করে সিন্ধান্ত নেবে সরকার। তবে মামলার দিকে অগ্রসর হওয়ার আভাস দিয়েছে এনবিআর। 

এনবিআর জানিয়েছে, বিদ্যুৎ খাতের ইউনাইটেড গ্রুপ সরকারের প্রাপ্য ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। গ্রুপের চার পরিচালকও সরাসরি ৪০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। অন্যদিকে, কেপিটাল গেইন ছিল ১৪ কোটি টাকা, যা কোম্পানির হিসাবে দেখিয়েছে ৩৮ কোটি টাকা। 

ইউনাইটেড গ্রুপের অধীনে মোট সাতটি পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আছে। সেগুলো হলো- পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার লিমিটেড, ইউনাইটেড আশুগঞ্জ এনার্জি লিমিটেড, ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেড, ইউনাইটেড এনার্জি লিমিটেড, ইউনাইটেড আনোয়ারা পাওয়ার লিমিটেড ও ইউনাইটেড জামালপুর পাওয়ার লিমিটেড। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র অলসভাবে বসিয়ে রেখে আগের সরকারের বদান্যতায় ক্যাপাসিটি চার্জের নামে ৭ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা আগেই পকেটে পুরেছে গ্রুপটি। নতুন করে ১২৬০ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে।

কর ফাঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউনাইটেড গ্রুপের পরিচালক কুতুবুদ্দিন আকতার রশিদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিদ্যুতের সব ধরনের আয় করমুক্ত, যার কারণে করারোপের বিষয়টি সঠিক নয়। আয়কর বিভাগ ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করছে’ বলে দাবি করেন তিনি।

সরকারের জারি করা বিভিন্ন সময়ের এসআরও অনুযায়ী, বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ থেকে পরবর্তী ১৫ বছর শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত। সে হিসাবে রাজস্ব ফাঁকিতে মূল সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন করবর্ষে তার শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৪-১৫ করবর্ষ থেকে ২০১৭-১৮ করবর্ষ পর্যন্ত উৎসে আয়কর কর্তন করলেও ২০১৮-১৯ করবর্ষ থেকে ২০২৪-২৫ করবর্ষ ফাঁকি দিয়েছে। এই সময়ে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে কর কর্তন করলেও নিজস্ব মালিকানাধীন কোম্পানির কাছ থেকে কর কর্তন করেনি। 

‘কর ফাঁকি দেওয়ার মাশুল হিসেবে বাড়তি ৬০০ কোটি টাকা চার্জ করা হয়েছে’ বলেন এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আব্দুর রাকিব। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘জরিমানাসহ ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দিতে হবে। 

সাংবাদিকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘৩৫ জন সাংবাদিকের বিষয়ে অনুসন্ধান চূড়ান্ত হয়েছে। তবে সিনিয়র সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খানের বিষয়ে সরকার অন্য কিছু ভাবছে। শিগগিরই এ বিষয়ে জানানো হবে।’

এনবিআরে নতুন ইউনিটের সাফল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আগামী রোববার একটি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কথা ভাবছি। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে দিনক্ষণ নির্ধারণ করে সাফল্যের কথা জানানো হবে।’

তবে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের সাফল্য সম্পর্কে এনবিআর সদস্য জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘কর ফাঁকি ঠেকাতে এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম। যেসব কেম্পানি কর ফাঁকি দিয়েছে, তাদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার সাফল্য অর্জন করেছে। আশা করছি প্রতিষ্ঠানটি আরও ভালো করবে।’  

রাজস্ব ফাঁকি ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা: ইউনাইটেড ময়মনসিংহ পাওয়ার লিমিটেড ২০১৯-২০ করবর্ষে ৮৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ২০২০-২১ করবর্ষে ১৪৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, ২০২১-২২ করবর্ষে ১৬৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ করবর্ষে ২১৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, ২০২৩-২৪ করবর্ষে ২২৩ কোটি ৭ লাখ টাকা ও সর্বশেষ ২০২৪-২৫ করবর্ষে ৯১ কোটি ৮২ লাখ টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছে। সর্বমোট এই ছয় করবর্ষে ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের পরিমাণ ৯৩৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭১ হাজার ৩১৯ টাকা।

একইভাবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ইউনাইটেড এনার্জি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮-১৯ করবর্ষে ১৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ করবর্ষে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ২০২০-২১ করবর্ষে ২৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ২০২১-২২ করবর্ষে ৩৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ করবর্ষে ৩৯ কোটি ৭ লাখ টাকা ও সর্বশেষ ২০২৩-২৪ করবর্ষে ৩৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছে। সর্বমোট এই ছয় করবর্ষে ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের পরিমাণ ৩২২ কোটি ২৬ লাখ ৬৯ হাজার ৩৭২ টাকা।

চার পরিচালকের ফাঁকি ৪০ কোটি টাকা: গ্রুপের চারজন পরিচালক আয়কর নথিতে করমুক্ত আয় দেখিয়েছেন। তারা হলেন- মঈনুদ্দিন হাসান রশিদ, হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মঈনুল আহসান শামীম ও ফরিদুর রহমান খান। এর মধ্যে মঈনুদ্দিন হাসান ২০১৭-১৮ করবর্ষে ৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছেন। হাসান মাহমুদ ২০১৭-১৮ করবর্ষে ১২ কোটি ৭১ লাখ ও ২০১৮-১৯ করবর্ষে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা, খন্দকার মঈনুল আহসান ২০১৬-১৭ করবর্ষে ১২ কোটি ৪২ লাখ টাকা ও ২০১৭-১৮ করবর্ষে ৪ কোটি ২ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছেন। এ ছাড়া ফরিদুর রহমান ২০১৭-১৮ করবর্ষে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা আয়কর ফাঁকি দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে এই কর ফাঁকির টাকা ঝুঁলিয়ে রাখতে করযোগ্য লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত দাবি করে রেফারেন্স মামলা করেন এই পরিচালকেরা।

১০ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ: বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ১০ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব ২৫ মে জব্দ করেছে। তারা হলেন- দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফত, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান, টিভি টুডের প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সাবেক প্রেস মিনিস্টার সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, ডিবিসি নিউজের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর নাজনীন মুন্নি, ইনডিপেনডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ ঘোষ সৈকত, গাজী টিভির এডিটর (রিসার্চ) অঞ্জন রায়, সময় টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ কমল দে, দৈনিক আমার সময়ের প্রধান সম্পাদক আব্দুল গাফফার খান ও যুগান্তরের সাবেক নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রাজু আহমেদ।

এ ছাড়া আরও ২৫ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাবে অর্থ পাচার ও আয়করসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চ’ড়ান্ত করেছে এনবিআরের আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। শিগগিরই এই তথ্য জানানো হবে বলে জানিয়েছে।
 

Link copied!