রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০২:৩৬ এএম

চাঁদাবাজি নয়, ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্বেই মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যাকাণ্ড

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০২:৩৬ এএম

চাঁদাবাজি নয়, ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্বেই  মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যাকাণ্ড

রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁন ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্যে হত্যার নেপথ্যে ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্বই মূল কারণ, চাঁদাবাজি নয় বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব। এদিকে হত্যা মামলার মূল আসামিদের এখনো গ্রেপ্তার না করা এবং মামলার এজাহার থেকে মূল তিন আসামিকে বাদ দেওয়া ‘রহস্যজনক’ বলে মনে করছে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, পুলিশ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেখান থেকেই দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, ঘটনার পেছনে ভাঙারি ব্যবসা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কাজ করেছে। হত্যাকারীরা ও ভুক্তভোগী সোহাগ একসময় একসঙ্গে ব্যবসা করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে লেনদেন ও অংশীদারত্ব নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তা ভয়াবহ হয়ে এই হত্যাকা-ে রূপ নেয়। আমরা জানতে পেরেছি, যারা এই হত্যাকা-ে জড়িত এবং যিনি মারা গেছেন, তারা আগে একসঙ্গে কাজ করতেন। পরবর্তীকালে আলাদা হয়ে গেলে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আর সেই দ্বন্দ্বের জেরেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে জানান ডিসি জসীম।
পুলিশ জানায়, হত্যাকা-ের পরদিন ১০ জুলাই ভুক্তভোগী সোহাগের বড় বোন কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন (মামলা নম্বর-৭)। এরপর ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব ও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
এদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিসি বলেন, অপরাধ তদন্তে রাজনৈতিক পরিচয় মুখ্য নয়। আমরা এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্যভাবে নিশ্চিত হতে পারিনি, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কি না।
চাঁদাবাজির কোনো তথ্য পুলিশ পায়নি বলে জানিয়েছেন ডিসি জসীম। তিনি বলেন, এটি ছিল একান্তই ব্যক্তিগত ও ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক চাঁদাবাজি বা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সংশ্লিষ্টতার তথ্য নেই।
প্রকাশ্যে এ ধরনের হত্যাকা-ে পুলিশি টহল বা আগাম ব্যবস্থা ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ঘটনার মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই পুলিশ সেখানে পৌঁছায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নিয়েছি।
গত ১০ মার্চ একই দিন চকবাজারে একটি ক্রোকারিজ মার্কেটের দখল দিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি এবং বাবুবাজার ব্রিজের নিচে ফুটপাত দখল নিয়ে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল। ওই ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হয়তো মিটফোর্ডের ঘটনা ঘটত না। এমন প্রশ্নের উত্তরে লালবাগের ডিসি জসীম উদ্দিন বলেন, ওই দুটি ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। একটি ঘটনায় চারজন ও আরেকটি ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমরা এসব বিষয়কে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই না। এখন কারও যদি রাজনৈতিক পরিচয় থাকে, সেটা ভিন্ন বিষয়। তবে আমরা দেখছি কারা অপরাধী, সে কী অপরাধ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি আলোচনায় বলেছি, পুরান ঢাকার ব্যাবসায়িক এলাকায় হয় চাঁদাবাজরা থাকবে, না হয় লালবাগের ডিসি থাকবে। আমরা কোনো চাঁদাবাজ বা সন্ত্রাসীদের ছাড় দেব না।

ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব: মিটফোর্ডে হত্যার ঘটনায় র‌্যাব ছায়া তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মহপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের কাছে অপরাধী যে দলেরই হোক, প্রভাবশালীই হোক, কোনো ছাড় নেই। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।
মব ভায়োলেন্সে জড়িত না হতে দেশবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনাটির ছায়া তদন্তের মাধ্যমে ডিএমপিকে সহায়তা করছে র‌্যাব। জড়িত সবাইকে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা যাবে। ছিনতাই, চাঁদাবাজির মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব মাঠে আছে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

মিটফোর্ড হত্যাকা-ের মূল তিন আসামিকে বাদ দেওয়া রহস্যজনক: এই হত্যাকা-ের মূল আসামিদের অদ্যাবধি গ্রেপ্তার না করা এবং মামলার এজাহার থেকে মূল তিন আসামিকে বাদ দেওয়া ‘রহস্যজনক’ বলে মনে করছে বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির এই তিন অঙ্গ সংগঠন। তিন সংগঠনের পক্ষে যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
এম মোনায়েম মুন্না বলেন, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সোহাগকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংস কায়দায় নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। এই নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে সমস্ত জাতি স্তম্ভিত। আমি এই নৃশংসতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। সভ্যতার এই যুগে এমন আদিম বর্বরতা আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইন্ধনদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে আমাদের তিন সংগঠনের পাঁচজনকে গতকাল আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি অতি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহির দিক থেকে যা কিছু প্রয়োজন, আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি।
মুন্না বলেন, কিন্তু এ ঘটনায় যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট, ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, রহস্যজনকভাবে তাদের মামলার প্রধান আসামি করা হয়নি। যারা প্রাণঘাতী আঘাতগুলো করেছে, তারা এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারও হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে এসেছে, বাদীর মেয়ে বলেছেন, মামলার এজাহারে খুনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজনকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকা সত্ত্বেও এখনো মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল না। এটা একটি বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।
মুন্না বলেন, আমরাও জানতে চাই, কারা এবং কেন এই তিন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্য কাউকে আসামি করল। আর ঘটনাটি বুধবারের। শুক্রবার এ ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগের ঘটনা কেন দুই দিন পরে প্রচারিত হলো, এর পেছনে কারা জড়িত, সেটাও খুঁজে দেখা উচিত। দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এই প্রশ্ন, বিচার-বিশ্লেষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!