শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. রাহুল শেখ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০৮:০৪ এএম

ছন্দ আর গান : জাগিয়েছে ভ্রমণপিপাসা

মো. রাহুল শেখ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০৮:০৪ এএম

ছন্দ আর গান : জাগিয়েছে ভ্রমণপিপাসা

‘ঘরের চার দেয়ালে নেই সব সত্য, বিশ্বই তো খোলে মহাজগতের পত্তন। প্রকৃতি শেখায় নীরব পাঠ, ভ্রমণেই মেলে আত্মসাৎ।’ কথাগুলো যেন সকলেরই জানা। যেই কথা, যেই শব্দ মনের মধ্যে ভিন্ন রকম চিত্র জাগিয়ে তোলে। ইচ্ছা করে কথাগুলোকে নিজের জীবনে স্মরণীয় করে রাখতে; নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে। সংগীতশিল্পী তাশরিফ খানের তাই তো আইলাম সাগরে কিংবা চল পাহাড় যাব গানের প্রতিটি লাইন যেন ভ্রমণের স্বাদ জাগিয়ে তোলে। দীর্ঘদিনের ইচ্ছা; সেইসঙ্গে ঢাকার ঘিঞ্জি পরিবেশে পড়াশোনা, টিউশন এবং দৈনন্দিন কর্মকা-ের মধ্যে ডুবে থাকায় অনুভব করলাম একটু রিফ্রেশমেন্ট প্রয়োজন। যেই ভাবনা, সেই পরিকল্পনা। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পাহাড়ে বেষ্টিত অন্যতম পর্যটন এরিয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম। গন্তব্য স্থির হলো সীতাকু-, চট্টগ্রাম। দুইদিনের ছুটি পেয়ে সাতজন বন্ধু বৃহস্পতিবার ক্লাস শেষে সাড়ে তিনটায় ভার্সিটির বাসে করে রওনা হলাম কুমিল্লার উদ্দেশ্যে। দূরবর্তী শহর কুমিল্লা, একটিমাত্র বাস। বাসের মধ্যে চাপাচাপি করে কুমিল্লা পৌঁছালাম সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। এখন সীতাকু- যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন এর অপেক্ষায়। ঢাকা থেকে রাত ১১ টায় ট্রেন ছাড়বে, আর কুমিল্লা থেকে ভোর ৪টায়।

আমরা পৌঁছে গেলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বন্ধুর বাসায়। সারারাত ঘুমের আভাসটুকুও নেই কারো চোখে। অনেক গল্প, আড্ডা, হাস্যরস করে রাত কাটিয়ে দিলাম। ভোর চারটা বাজতেই আমরা স্টেশনে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ট্রেন তিন ঘণ্টা বিলম্বে সাতটায় এসে পৌঁছাল কুমিল্লা স্টেশনে।  আমরা তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লাম ট্রেনের ছাঁদে। ট্রেন যেন সর্পিল গতিতে ছুটে চলেছে চারপাশে বিস্তীর্ণ সবুজ, সোনালি বাংলার প্রান্তর দিয়ে। ছাদে বসে দুইপাশে হাত দিয়ে মুখ আকাশের দিকে করে মুক্ত বাতাস টেনে নিচ্ছিলাম। ভাবোদয় হলো, উন্নত জীবনের আশায় কেন যে মানুষ ঢাকা আসে! আরও কত কী ভাবনা!

এভাবে মুক্ত বাতাস গ্রহণ, আনন্দ-উল্লাস, দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা এবং ছবি তুলতে তুলতে সাড়ে ৯টায় এসে পৌঁছালাম গন্তব্য সীতাকু- স্টেশনে। ট্রেনের ছাদে আমরা প্রকৃতি, সবুজে ঘেরা বিস্তীর্ণ মাঠ, দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি পাহাড় বেশ উপভোগ করেছি; যদিও এটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। পরামর্শ থাকবে, ছাদে জার্নি এড়িয়ে চলা। রাস্তায় অনেক গাছপালা, যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। 

স্টেশন থেকে নেমেই খাবারের জন্য চলে গেলাম সৌদিয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে।  সেখান থেকে খাবার খেয়েই বাসে করে বোটানিক্যাল গার্ডেন, সুপ্তধারা ঝরনা, ইকো পার্কের পথে ছুটলাম। ইকো পার্কের মূল সড়কে বাস থেকে নেমে হেঁটে পার্ক গেটে পৌঁছালাম। সেখানে হোটেল কর্মচারীদের আপ্যায়ন খুবই ভালো লাগার মতো। আমরা নিজেদের ব্যাগ হোটেল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে রেখে পার্কে প্রবেশের টিকিট নিয়ে ঢুকে পড়লাম বহুল কাক্সিক্ষত স্বপ্নের জায়গায়।

পার্কের মধ্যে দেখা গেল সিএনজিচালিত গাড়ি। অনেকেই দূরবর্তী রাস্তা পাড়ি দিতে গাড়ি ব্যবহার করছে। আমরা হেঁটে রওনা করলাম সুপ্তধারা ঝরনার দিকে। আঁকাবাঁকা, উঁচুনিচু রাস্তা পাড়ি দিয়ে আমরা ঝরনায় পৌঁছানোর রাস্তায় চলে এলাম। ঝরনায় পৌঁছাতে দীর্ঘ পথ সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে। ভেতরের ভালোলাগা এবং উত্তেজনার সহিত নামতে নামতে পৌঁছে গেলাম ঝরনার সম্মুখে। আমরা যেন এক জঞ্জালমুক্ত পরিবেশে এসে হাজির হলাম- এমনই বোধোদয় হলো। ঝরনার পানিতে নিজেদের ডুবিয়ে নিলাম। বিভিন্ন স্টাইলে সিঙ্গেল এবং গ্রুপ ছবি ধারণ করলাম। হঠাৎ গুড়িগুড়ি বৃষ্টি এলো, সে এক ভিন্ন রকম অনুভূতি। মনের মধ্যে উচ্চারিত হতে লাগল, ‘গুড়গুড়ি ধ্বনি পাহাড়ে বাজে, প্রকৃতির প্রাণ ঝরনায় সাজে। মনটা চায় হারিয়ে যেতে, বৃষ্টির গল্প কানে পেতে।’

এবার সহস্রধারা ঝরনায় যাওয়ার পালা। সুপ্তধারা ত্যাগ করলাম খুবই সতর্কতার সঙ্গে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে সিঁড়ি পিচ্ছিল হয়ে আছে, যা বেশ বিপজ্জনক। পরামর্শ থাকবে, বর্ষা মৌসুমে ঝরনা পরিদর্শন বিরত থাকা। সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসতেই কোল্ড ড্রিংকসের তৃষ্ণা জাগল। দোকানে লাচ্ছি কিনতে গিয়ে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হলো। বিশ টাকা মূল্যের লাচ্ছি  ত্রিশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পণ্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এবার হাঁটতে হবে আরও বহুদূর। ক্রমেই যেন উঁচুতে বেয়ে চলেছি। হাঁটতে হাঁটতে একপর্যায়ে চলে এলাম সহস্রধারা ঝরনায় পৌঁছানোর মূল সিঁড়িতে। সতর্কতার সঙ্গে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে কাদা মেশানো সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলাম ঝরনার সম্মুখে। তখনো এক ভিন্ন রকম চিত্র। যেন ক্রমেই রূপকথার গল্পের ন্যায় নিজেদের মিলিয়ে ধরছি আমরা। সেখানে পৌঁছাতেই গুটিকয়েক পর্যটকদের মুখে জোঁক আতঙ্ক।  আমরা ভয় না করেই নেমে পড়লাম ঝরনার পানিতে। ঝরনার পানিতে নিজেদের ভিজিয়ে মনে হচ্ছিল, এতদিনে জমে থাকা ক্লান্ত, বিষাদ সব ধুয়ে বেয়ে পড়ছে শরীর থেকে।

এখানে সময় কাটাতে কাটাতে প্রায় দুইটা বেজে গেল। এবার আমরা খাবার এবং ফ্রেশ হওয়ার জন্য রওনা করলাম ব্যাগ রেখে আসা সেই হোটেলের দিকে। হোটেলে এসে মাথাপিছু একশ টাকা প্যাকেজে মুরগির মাংস, ডাল, সবজি এবং ভাত খেয়ে নিলাম। তখন সময় চারটা বেজে ছুঁইছুঁই। 

এবার বাসে করে সীতাকু- বাজারে পৌঁছালাম। উদ্দেশ্য গুলিয়াখালী বিচ ভ্রমণ। সীতাকুন্ড বাজার থেকে সিএনজিচালিত গাড়ি করে ত্রিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছালাম গুলিয়াখালী বিচ সংলগ্ন স্ট্যান্ডে। গাড়ি থেকে নেমেই মাটির সরু রাস্তা দিয়ে গুটিগুটি পায়ে পৌঁছে গেলাম গুলিয়াখালী বিচে। গুলিয়াখালী বিচের অপর নাম মুরাদপুর বিচ। আমরা দূর থেকেই সমুদ্রের গর্জন শুনছিলাম। বিচে যাওয়ার রাস্তার ধারে ম্যানগ্রোভ বন দেখতে পেলাম, যা বিচের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। বেশ উদ্দীপনার সঙ্গে নেমে সমুদ্রের গর্জন এবং তার বুকের ওপর বেয়ে চলা ঢেউ উপভোগ করলাম।

তখন অনেকটা সন্ধ্যা হয়ে এসেছে এবং গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমরা বিচে অবস্থিত দোকানে আশ্রয় নিলাম। বৃষ্টি কিছুটা থামতেই সিএনজি স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলাম। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে মাটির তৈরি সরু রাস্তা কাদা এবং পিচ্ছিল হয়ে আছে। অনেকেই পাড়ি দিতে পারছে না কাদাযুক্ত রাস্তা। এখানেও এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হলো। এ সময় ট্রলারে দশ টাকার ভাড়া পঞ্চাশ টাকা দাবি করে যাত্রী বহন করতে দেখা যায়। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এই বিষয়গুলো তদারকি করার। পর্যটকদের বর্ষা মৌসুমে বিচ ভ্রমণ পরিহার করার পরামর্শও থাকবে।

সিএনজি স্ট্যান্ডে এসে গাড়িতে করে পৌঁছে গেলাম সীতাকু- বাজারে। সেখান থেকে বাসের টিকিট কেটে রাত সাড়ে আটটায় রওনা করলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। সারারাত বাস চলল, ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম। কুমিল্লা এসে যাত্রাবিরতি পেয়ে সামান্য নাস্তা করার পর আবার বাস ছৃটে চলল। রাত দুইটায় এসে পৌঁছলাম ঢাকা। একে একে যে যার বাসায় পৌঁছে গেলাম। ‘ইচ্ছা কী হয় ওই পাহাড়ি ঝরনা, সমুদ্রের গর্জন ছেড়ে ইট পাথরের এই শহরে ফিরে আসতে? মন যে চায়, পড়ে থাকি ওই সমুদ্রের পাড়ে; ঝরনার পানিতে দেহ ভিজিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে।’

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!