শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০৯:৫১ এএম

শিক্ষক নিয়োগে যোগ্য প্রার্থী পাচ্ছে না এনটিআরসিএ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০৯:৫১ এএম

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) লোগো। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) লোগো। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এই পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭১৯ জন প্রার্থী। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর মাত্র ৪১ হাজার জন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেয়েছেন। অথচ দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ১ লাখ ৮২২টি শূন্য পদের চাহিদা জানানো হয়েছিল। ফলে প্রায় ৬০ হাজার পদ ফাঁকা থেকেই যাচ্ছে।

ধাপে ধাপে ঝরে পরা প্রার্থীরা

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন ১৩ লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ জন। এরপর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬৮০ জন, উত্তীর্ণ হন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ৮১ হাজার ২০৯ জন, যাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হন ৬০ হাজার ৬৩৪ জন। কিন্তু নিয়োগের শর্ত পূরণ না করায় প্রায় ২০ হাজার উত্তীর্ণ প্রার্থী সুপারিশ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। ফলে চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪১ হাজার।

যোগ্যতার অভাবই বড় চ্যালেঞ্জ

এনটিআরসিএর সদস্য (যুগ্ম সচিব) ইরাদুল হক জানান, ‘বিভিন্ন বিষয়ের শূন্য পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। যেমন, ইবতেদায়ি মৌলভি পদে শূন্য পদ আছে প্রায় আট হাজার, কিন্তু মাত্র ৯০০ জন প্রার্থী পাস করেছেন। চারু ও কারুকলা বিষয়ে প্রায় নয় হাজার শূন্য পদের বিপরীতে পাস করেছেন মাত্র ৫০০ জন। এর ফলে উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়াই এখন শিক্ষক নিয়োগে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়ে প্রশ্ন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বিপুলসংখ্যক আবেদনকারীর মধ্য থেকেও যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এতে বোঝা যায়, উচ্চশিক্ষিত অনেক তরুণ বর্তমান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে শুধু ডিগ্রি নয়, প্রয়োজন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান, দক্ষতা ও সঠিক শিক্ষাদানের সক্ষমতা।

আগের পরীক্ষাগুলোর চিত্রও একই

১৬তম নিবন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন সাড়ে ৯ লাখ প্রার্থী, চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন মাত্র সাড়ে ১৮ হাজার। ১৭তম পরীক্ষায় আবেদন করেন ২৪ লাখ ১০ হাজার ৯৬২ জন, চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন মাত্র ২৩ হাজার। তুলনামূলকভাবে ১৮তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হার কিছুটা বেশি হলেও, প্রয়োজনীয়সংখ্যক পদ পূরণে তা এখনো অপ্রতুল।

উচ্চশিক্ষিতদের বেকারত্ব বাস্তবতা

বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়ন টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন বলছে, দেশের বেকারদের মধ্যে ২৮ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলও এই বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মানসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ার পেছনে শিক্ষার মানের অবনতি অন্যতম কারণ।’

শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন প্রয়োজন

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষক নিয়োগে আগ্রহ বাড়াতে বেতন, পদোন্নতি, বদলি ও অন্যান্য সুবিধার উন্নয়ন জরুরি। এসব উন্নয়ন ছাড়া মেধাবী তরুণেরা শিক্ষক পেশায় আসতে আগ্রহী হবেন না। ফলে প্রতি বছরই বড়সংখ্যক পদ শূন্য থাকবে।

এটি পুরো শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি

একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া আসলে আমাদের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ঘাটতির প্রতিফলন। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত না করলে এই সংকট আরও গভীর হবে।’

সামনে কী করা উচিত?

পরবর্তী শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার পাশাপাশি একটি বিশেষ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে এনটিআরসিএ। এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মানসম্মত প্রার্থী না পাওয়ায় প্রতিবছরই বহু পদ ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। আমরা এই সংকট নিরসনে কিছু সুপারিশমালা তৈরি করছি, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’

টেকসই সমাধান কী?

শিক্ষাবিদদের মতে, কেবল নিয়োগ কার্যক্রম বাড়িয়ে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। শিক্ষক তৈরির প্রক্রিয়াতেই মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রম উন্নয়ন ও শিক্ষাদানের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর না দিলে শিক্ষাক্ষেত্রে শূন্যপদের সংকট ও মানের অবনতি আরও বাড়বে।

Link copied!