রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০২:১৯ এএম

চাকরি শুরু অনিয়মে, দুর্নীতি দিয়ে শেষ

মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ০২:১৯ এএম

চাকরি শুরু অনিয়মে, দুর্নীতি দিয়ে শেষ

অনিয়ম করে চাকরি জীবন শুরু করে দুর্নীতি দিয়ে শেষ করলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী জাবেদ করিম। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র চার দিন আগে তিনি সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় প্রায় সাত কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৩ নভেম্বর তিনি রুটিন দায়িত্বে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান এবং ৩০ নভেম্বর তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে যান। মাত্র ২৭ দিনের জন্য নিয়োগ পাওয়ায় শুরু থেকে তিনি তেমন সরব ছিলেন না। শোনা যায়, অফিসে এসে তিনি চুপচাপ বসে থাকতেন, দুই একটি ফাইল এলে সই করতেনÑ না হলে মধ্যাহ্নভোজ সেরে অফিস ত্যাগ করতেন। এই পুরো সময় কারো সঙ্গে তেমন কথাবার্তাও বলতেন না। অফিস কর্মচারীদের মতে, তার প্রাত্যহিক গন্তব্য ছিল মন্ত্রনালয়।

এমন একজন কর্মকর্তা হঠাৎই ২৬ নভেম্বর কেনো তৎপর হলেনÑ বিষয়টি নিয়ে জল্পনা চলছে এখনো। এখানেই শেষ নয়Ñ ৩০ নভেম্বর শেষ কর্মদিবসের দুপুরে তিনি বেশ কিছ বদলির আদেশে সই করেছেন। সন্ধ্যার দিকে তিনি বিদায় নেন। সংস্থাটির বেশ কিছু কর্মচারী জানান, ২৬ নভেম্বর জাবেদ করিম চুপিসারে সপ্তম তলায় তার পূর্বতন কার্যালয়ে যানÑ সেখানে বসেই তিনি নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য সারেন, তাকে সবকিছু জোগান দেন প্রশাসন শাখার সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী শফিক আহমেদ। পদায়ন ও বদলি করা হয় কিছু সহকারী প্রকৌশলী এবং উপজেলা প্রকৌশলীকে। এ ছাড়া সেদিনই রুরাল ট্রান্সপোর্ট আপগ্রেডেশন প্রজেক্টের (আরইউটিডিপি) প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) ফারুক আহমেদকে।

অভিযোগ রয়েছে, এই বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ বাণিজ্যে কম করে হলেও সাত কোটি টাকায় রফা হয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, হঠাৎ এখতিয়ারবহির্ভূত এই বিপুল অংকের বাণিজ্যের পেছনে রয়েছে চাকরির মেয়াদ সম্প্রসারনের জন্য উপঢৌকন জোগাড়ের অভিপ্রায়। পাশাপাশি তিনি নিজ জেলা নোয়াখালীর রাস্তাঘাট সংস্কার বাবদ ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দও দিয়েছেন। রুটিন দায়িত্বে থাকা একজন প্রধান প্রকৌশলীর এসব কাজের এখতিয়ার আছে কি নাÑ এ প্রশ্নের উত্তর মিলেনি কোনো তরফ থেকেই। রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই জাবেদ করিমের চাকরি শুরু অনিয়মে, শেষও হলো দুর্নীতি দিয়ে। দুর্নীতিতে অর্জিত হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

শোনা যায়, জাবেদ করিমের বাবা ছিলেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের একজন প্রভাবশালী প্রকৌশলী। সেই পরিচিতি ও প্রভাবেই ছেলের চাকরির দুয়ার খুলে দেয়। কুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ থেকে বিএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগেই সরাসরি এলজিইডির রাজস্ব খাতের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি জুটিয়ে নেন জাবেদ করিম। অথচ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টত বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস আবশ্যক বলে উল্লেখ ছিল। ফল প্রকাশের আগেই তার নিয়োগ পাওয়া ছিল নিয়োগ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং গুরুতর অনিয়ম। এ ধরনের অনিয়ম প্রমাণিত হলে শুধু নিয়োগ নয়, চাকরি বাতিল, অতীতের সব বেতন-ভাতা ফেরত নেওয়া, এমনকি আরও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিয়োগ বিধিতে থাকলেও তার ক্ষেত্রে এসব রহস্যজনক কারণে প্রয়োগ হয়নি।

এদিকে ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতাসীন থাকাকালে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লক্ষ্মীপুরের জিয়া উল হক জিয়া। একই জেলার বাসিন্দা জাবেদ করিম একজন জুনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হওয়া সত্ত্বেও শুধু রাজনৈতিক প্রভাবেই শুরু হয় তার ক্ষমতার উত্থান। তৎকালীন এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল হাসান বিষয়টিকে প্রথমে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে উড়িয়ে দেন। একজন সহকারী প্রকৌশলীকে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া শুধু প্রচলিত নিয়মেরই লঙ্ঘন নয়, প্রশাসনিক শৃঙ্খলারও পরিপন্থিÑ এমন যুক্তি দেখিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মন্ত্রীর সরাসরি চাপের সামনে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি। ফলে সেই সময়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে জুনিয়র সহকারী প্রকৌশলী জাবেদ করিমকে লক্ষ্মীপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এই অতিরিক্ত দায়িত্বের মেয়াদও ছিল প্রচলিত নিয়মবহির্ভূত। দুই বছরের স্থলে তা টেনে নেওয়া হয় প্রায় পাঁচ বছর। ওই সময় তিনি নিয়ন্ত্রণ করেছেন জেলার উন্নয়ন তহবিল, কার্যাদেশ ও আর্থিক ক্ষমতার বড় অংশ। সেই সময় টেন্ডার হতো হাতে লেখা কাগজে। এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগান সুচতুর জাবেদ করিম। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হকের নাম ব্যবহার করে বেপরোয়া দুর্নীতিতে তিনি শত কোটি টাকা আয় করেন। ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে একের পর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হন।

একই অভিযোগে জাবেদ করিমের নামও তখনকার তালিকায় ওঠে আসে। কিন্তু অদৃশ্য হাতের ইশারায় তড়িঘড়ি সব প্রক্রিয়া শেষ করে উচ্চশিক্ষার নামে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে দেশে আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন সময়েও জাবেদ করিম ছিলেন ক্ষমতার বলয়ের একেবারে কাছাকাছি। জনশ্রুতি আছে, গণভবনে ছিল তার অবাধ যাতায়াত। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের  পর তিনি  রাতারাতি  জাতীয়তাবাদী ঘরানায় ভোল পাল্টে নেন।

জানা যায়, এক সময় তিনি ছিলেন সড়ক ও সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। সেই সময়ে বলতে গেলে, কোনো নতুন সড়ক বা সেতু নির্মিত হয়নি। এমনকি পুরোনো সড়ক তেমন রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। কিন্তু সব কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল পরিশোধের রেকর্ড গড়েন তিনি। এ ছাড়া বদলি-পদায়নে বাণিজ্যে তিনি বরাবরই ছিলেন মহা ওস্তাদ।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, প্রকল্প পরিচালকের পদ পেতে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে। একইভাবে নিয়োগ ও বদলি থেকেও তার কয়েক কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।

বিষয়টি খোলসা করতে সদ্য আরইউটিডিপি প্রকল্পে প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক ফারুক আহমেদকে গত ৪ ডিসেম্বর ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি একটু বাইরে আছি, ফিরে আপনাকে ফোন দিচ্ছি।’ পরে তিনি ফোন দেননি। এরপর একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে সদ্য অবসরে যাওয়া অভিযুক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাবেদ করিমের ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি। তার নাম্বারটি ‘কল ফরোওয়ার্ড’ অবস্থায় ছিল।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!