শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড। আজকের প্রজন্ম সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আগামীতে দেশ ও দশের হাল ধরবে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসম্মত পাঠদানের অন্যতম প্রধান বাধা শিক্ষক সংকট। মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও করুণ। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজধানীসহ সারা দেশে পুরোনো ও নতুন মিলিয়ে মোট সরকারি স্কুল রয়েছে ৬৯৯টি। এর মধ্যে পুরোনো ৩৩৬, নতুন হয়েছে ৩৬৩টি। রাজধানীতে মোট স্কুল রয়েছে ৪৭টি। এর মধ্যে ৮টিতে স্কুলের সঙ্গে কলেজও সংযুক্ত রয়েছে। এই হিসাবে রাজধানীতে মাধ্যমিক স্তরের মোট স্কুল রয়েছে ৩৯টি।
এসব স্কুলে প্রতি শিফটে প্রধান শিক্ষক, সিনিয়র ও সহকারী শিক্ষক পদে অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা ২৭। এই হিসাবে দুই শিফটে ৫৪ জন থাকার কথা। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান চলছে অর্ধেকের চেয়েও কম জনবল দিয়ে। রাজধানীসহ সরকারি স্কুলগুলোয় শিক্ষকের মোট পদ রয়েছে ১৫ হাজারের মতো। বর্তমানে কর্মরত ৯ থেকে ১০ হাজার। অর্থাৎ, প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার পদ শূন্য রয়েছে।
এ ছাড়াও সংকট রয়েছে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষকের পদেও। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৩৯টি স্কুলের মধ্যে মাত্র ১৬টিতে নিয়মিত প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। বাকি ২৩টি স্কুল চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। স্কুলের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে স্কুল পরিচালনায় দুই ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নিতে পারছেন না। অন্যদিকে নিয়মিত প্রধান শিক্ষক না থাকায় স্কুল পরিচালনার নানা কাজে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে যদি বলা হয়, শিক্ষকের চরম সংকট নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই স্কুলে দুই শিফটে ৫০ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৩৩ জন। একইভাবে বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুই শিফটে ৫৩টি পদের মধ্যে ৩৯ জন শিক্ষক কর্মরত। তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৫টি পদের মধ্যে রয়েছেন ৪৭ জন।
শিক্ষকরা জানান, অতিরিক্ত ক্লাস নিতে গিয়ে রীতিমতো গলদঘর্ম হয়ে পড়ছেন তারা। একেকজনকে প্রতিদিন সাত থেকে আটটি ক্লাস নিতে হচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষকদের অসুস্থতা ও নানা কারণে ছুটির বিষয় রয়েছে। তখন পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই অবস্থা। সংকট কবে শেষ হবে বুঝতে পারছেন না। এর মধ্যে অবসরেও চলে যাচ্ছেন অনেক শিক্ষক। নতুন পদায়ন না দিলে বর্তমানের জোড়াতালির পাঠদানও একসময় ভেঙে পড়তে পারে বলে শঙ্কা করছেন তারা।
যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন এই শিক্ষক সংকট। এ ক্ষেত্রে কর্তাব্যক্তিদের ভাষ্য, সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বন্ধ থাকা এবং নিয়োগবিধি জটিলতার কারণে মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষকের সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি যেসব শিক্ষক অবসরে যাচ্ছেন, নতুন নিয়োগ না হওয়ায় সেই পদগুলোও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকছে। এ ছাড়াও গত প্রায় এক বছর ধরে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএস থেকে ননক্যাডারে ২ হাজার ৪৫০টি পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব পাবিলক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি) পাঠানো হলেও এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
দ্রুত নিয়োগবিধি সংশোধন করে প্রধান শিক্ষক পদে ও শূন্য পদে সহকারী শিক্ষকদের পদায়ন করা প্রয়োজন, না হলে এই সংকটের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবে ভেঙে পড়তে পারে মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন