বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৮:০৪ এএম

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৮:০৪ এএম

বাংলাদেশ

বাংলাদেশ

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) সাম্প্রতিক গবেষণা দেশের দারিদ্র্যের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে ১০ শতাংশ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমায় নেমে এসেছে। এর বাইরে আরও ১৮ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমায় নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এমন পরিস্থিতি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রার জন্য এক গুরুতর হুমকি।

পিপিআরসির জরিপে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, বাংলাদেশ একসঙ্গে তিনটি বড় সংকটের প্রভাব মোকাবিলা করছে: কোভিড-১৯ পরবর্তী অভিঘাত, লাগামহীন মূল্যস্ফীতি এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ফলে বিশেষত শহুরে পরিবারের আয় কমেছে, ব্যয় বেড়েছে। ২০২২ সালে যেখানে একটি শহুরে পরিবারের গড় আয় ছিল ৪৫ হাজার ৫৭৮ টাকা, সেখানে বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকায়। অথচ মাসিক গড় খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার টাকায়। অর্থাৎ শহুরে পরিবারগুলো এখন ঘাটতি নিয়ে বেঁচে আছে। অন্যদিকে গ্রামীণ পরিবারগুলোর আয় কিছুটা বেড়েছে বটে, তবে ব্যয় মিটিয়ে তাদের হাতে সঞ্চয় নেই বললেই চলে। জাতীয় গড় হিসেবেও মাসিক আয় ও ব্যয় প্রায় সমান, অর্থাৎ পরিবারগুলো মাস শেষে কোনো উদ্বৃত্ত রাখতে পারছে না।

সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, পরিবারের মোট খরচের ৫৫ শতাংশ চলে যাচ্ছে খাদ্য কিনতে। এরপর শিক্ষা, চিকিৎসা, যাতায়াত ও আবাসনের মতো মৌলিক খাতে পর্যাপ্ত ব্যয় সম্ভব হচ্ছে না। দারিদ্র্য পরিস্থিতির আরও কয়েকটি শঙ্কাজনক দিক গবেষণায় উঠে এসেছে: দীর্ঘস্থায়ী রোগের বোঝা, নারীপ্রধান পরিবারের দ্বৈত বঞ্চনা, ঋণের চাপে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো, খাদ্য অনিরাপত্তা এবং মৌলিক সেবার স্থবিরতা। সবচেয়ে দরিদ্র ১২ শতাংশ পরিবারকে খাবারের তালিকা ছোট করতে হয়েছে, আর ৯ শতাংশ পরিবার অন্তত একদিন পুরো দিন না খেয়ে থেকেছে। এটি একটি উদ্বেগজনক সামাজিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত।

একটি সমাজ তখনই উন্নত বলে বিবেচিত হয়, যখন তার প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি একটি নৈতিক ও জাতীয় দায়। তাই এখন সময়, শুধু পরিকল্পনায় নয়, কার্যকর উদ্যোগ, বাস্তবায়ন ও জবাবদিহির মাধ্যমে দারিদ্র্য নির্মূলের পথে এগিয়ে যাওয়ার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর নীতি পদক্ষেপ। প্রথমত, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাশ্রয়ী বাজার ব্যবস্থা ও ভর্তুকি জোরদার করতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে হবে। তৃতীয়ত, কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে রাষ্ট্রকে নতুনভাবে মনোযোগ দিতে হবে বিশেষত তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের জন্য। চতুর্থত, ঋণসহায়তা কর্মসূচিকে এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

সবচেয়ে বড় কথা, সরকারকে এখন ‘মানুষের অভিজ্ঞতাভিত্তিক নীতি প্রণয়ন’ গ্রহণ করতে হবে। জনগণ যেসব সমস্যায় ভুগছে, অতিরিক্ত ব্যয়, খাদ্যসংকট, ঘুষ, চিকিৎসার বোঝা, এসব বাস্তবতাকে নীতির কেন্দ্রে আনতে হবে। অন্যথায় দারিদ্র্য শুধু পরিসংখ্যান নয়, আগামী দিনে বড় সামাজিক সংকট হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!