মিয়ানমারে সেনাবাহিনী শুক্রবার গভীর রাতে কিউকটাউ টাউনশিপে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জান্তা বাহিনী বিমান হামলা চালায়। এ হামলার লক্ষ্য ছিল বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা দখল করা। তবে হামলার শিকার হয় নিরীহ শিক্ষার্থীরা, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। বিমান হামলায় ভয়াবহ এক ট্র্যাজেডি ঘটেছে। দেশটির পশ্চিম রাখাইন প্রদেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে হামলায় ১৯ শিক্ষার্থীসহ ২২ জন নিহত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহল এ হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) আরাকান আর্মি নামের একটি জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তারা জানায়, আরাকান আর্মির টেলিগ্রাম পোস্টে জানানো হয়, রাতের বেলা বিদ্যালয় লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ১৯ শিক্ষার্থীসহ ২২ জন নিহত হয় এবং আরও ২২ জন গুরুতর আহত হয়। নিহতদের পরিবারকে গভীর সমবেদনা জানিয়ে হামলার জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে দায়ী করে তারা।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, জান্তার একটি যুদ্ধবিমান ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলে। এত ভারী অস্ত্র শিক্ষার্থীদের আশ্রয়কেন্দ্রে ব্যবহার করা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল বলে মন্তব্য করেছে অধিকারকর্মীরা। তথ্যসূত্র: আরব নিউজ, দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।
স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং বাসিন্দাদের মতে, শুক্রবার রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকতাও টাউনশিপের থায়াত তাবিন গ্রামে একটি বেসরকারি বোর্ডিং স্কুলে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় মোট ২২ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই স্কুলছাত্র। গত বছরের জানুয়ারি থেকে কিয়াউকতাও শহর আরকান আর্মির (এএ) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্থানীয় সময় রাত ১টায় সংঘটিত বিমান হামলার সময় ৫০০ পাউন্ড ওজনের দুটি বোমা ‘পিননিয়া পান খিন’ উচ্চ বিদ্যালয় এবং কাছাকাছি একটি এলাকায় আঘাত হানে। এদিকে স্থানীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।
শনিবার টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে এএ জানায়, শুক্রবার রাতের পরপরই কিয়াউকতাও টাউনশিপের দুটি বেসরকারি হাই স্কুলে হামলা চালানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নিরীহ শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা তাদের পরিবারের মতোই গভীর শোকাহত।’ আরাকান আর্মি হামলার জন্য সেনা জান্তাকে দায়ী করলেও, এএফপি সেনা মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো মন্তব্য পায়নি। কিছু ছবিতে দেখা গেছে, স্কুলের একটি ভবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আশপাশের অনেক ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি সমাজকল্যাণ সংস্থার একজন সদস্য ‘দি ইরাবতি’কে বলেন, ‘আমরা যতই আপডেট পাচ্ছি, ততই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এখন কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন।’ আরাকান আর্মি গত এক বছর ধরে মিয়ানমারের শাসক সেনা সরকারের সঙ্গে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তীব্র লড়াই চালাচ্ছে এবং ইতিমধ্যে বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
২০২১ সালে অং সান সু চির বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে জান্তা বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। এরপর দেশটিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়, রাখাইনের এই সংঘাত তারই একটি অংশ। এক বিবৃতিতে ইউনিসেফ এ নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘এই হামলা রাখাইন অঙ্গরাজ্যে ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ সহিংসতার ধারার অংশ। শিশু ও পরিবারগুলো এর চরম মূল্য দিচ্ছে।’ ইন্টারনেট ও ফোন সংযোগ অস্থিতিশীল থাকায় কিয়াউকতাও এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি এএফপি। মিয়ানমারের সেনারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র বিরোধিতার মুখে রয়েছে এবং বেসামরিক জনগণের ওপর বিমান ও গোলাবর্ষণের অভিযোগ নিয়মিতই উঠছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন