বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম, গাজীপুর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১২:০২ এএম

অযত্ন আর অবহেলায় গাজীপুর সাফারি পার্ক

শহিদুল ইসলাম, গাজীপুর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫, ১২:০২ এএম

অযত্ন আর অবহেলায় গাজীপুর সাফারি পার্ক

খুঁড়িয়ে চলছে একসময়ের জীববৈচিত্র্য-সমৃদ্ধ গাজীপুর সাফারি পার্ক। রক্ষণাবেক্ষণ ও অব্যবস্থাপনার অভাবে স্থাপিত বহু স্থাপনা নষ্ট, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মৃত্যুসহ অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক প্রাণী। বর্তমানে পার্কের বেহাল অবস্থা দেখা দিয়েছে। এতে দিনে দিনে কমছে দর্শনার্থী। এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পর্যটক, দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা।

পার্ক সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের ইন্দ্রপুরে অবস্থিত পার্কটি ৪ হাজার ৯০৯ একর ভূমির মধ্যে ৩ হাজার ৮১৯ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা সাফারি পার্ক ছোট ছোট টিলা ও শালবনসমৃদ্ধ। থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের অনুকরণে তৈরি পার্কটি ২০১৩ সালে চালু করা হয়। এই পার্কের অন্যতম আকর্ষণ কোর সাফারি। পুরো পার্কটি স্কয়ার, কোর সাফারি পার্ক, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, সাফারি কিংডম, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক নামক পাঁচটি অংশে বিভক্ত।

ঢাকা ও আশপাশ থেকে সারা দিন পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য এই সাফারি পার্ক ছিল আদর্শ জায়গা। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও অব্যবস্থাপনার অভাবে স্থাপিত বহু স্থাপনা নষ্ট, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর মৃত্যুসহ অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক প্রাণী। বর্তমানে পার্কের বেহাল অবস্থা দেখে স্থানীয় ও দর্শনার্থীরা মনঃক্ষুণœ হচ্ছেন।

জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় পার্কটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এর মূল ফটক, শেখ মুজিবুর রহমানের মুর‌্যাল, প্রাণী জাদুঘর, পাখিশালা, পার্ক অফিসসহ বিভিন্ন খাদ্যের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। লুটপাট করা হয় খাদ্য বিক্রির দোকানের মালামাল, বৈদ্যুতিক মোটর, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, চেয়ার-টেবিলসহ নানা সরঞ্জাম। ভাঙচুরে কারণে অফিসের সব কটি কক্ষের জানালার কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙা হয় রেস্ট হাউসের জানালার কাচ এবং পর্যবেক্ষণে ব্যবহৃত দুটি জিপ গাড়ি। এর ৩ মাস ৯ দিন পর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় গাজীপুর সাফারি পার্ক।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পার্কে জেব্রা, ওয়াইল্ড বিস্ট, জলহস্তী, ময়ূর, অজগর, কুমির, হাতি, বাঘ, ভালুক, সিংহ, হরিণ, লামচিতা, শকুন, কচ্ছপ, রাজধনেশ, কাকধনেশ, ইগল, সাদা বক, রঙিলা বক, সারস, কাস্তেচরা, মথুরা, নিশিবক, কানিবক, বনগরু গুইসাপ, সজারু, বাগডাশ, মার্বেল ক্যাট, গোল্ডেন ক্যাট, ফিশিং ক্যাট, খেঁকশিয়াল, বনরুইসহ শতাধিক প্রজাতির প্রাণী থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তা নেই।

বর্তমানে পার্কে একটি জিরাফ, ৪২টি জেব্রা, ১১টি ওয়াইল্ড বিস্ট, ৭টি বাঘ, ৪টি সিংহ, ভালুক, ২ শতাধিক হরিণ, ১১টি গয়াল, ৯টি নীলগাই, ৫টি সাম্বার হরিণ, ৩টি কমন ইলন, ১৫টি মায়া হরিণসহ হাতি, ঘোড়া, মেকাউ, ময়ূর, ময়না, শকুন, ধনেশ, মদনটাক, প্যালিকেনসহ কয়েক প্রজাতির প্রাণি, পাখি, সরীসৃপ রয়েছে। এ ছাড়া দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে শিশু পার্কসহ অনেকগুলো স্থান একেবারেই বন্ধ রাখা হয়েছে।

ভেতরে কোর সাফারির চার কিলোমিটার সড়কে বিশেষ বাসে চড়ে বাঘ-সিংহ, ভালুকসহ বিভিন্ন আফ্রিকান প্রাণী পর্যবেক্ষণ করেন দর্শনার্থীরা। ওই সড়কের তিন কিলোমিটার কাদা-জল আর খানাখন্দে ভরে গেছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ আর গভীর খাদের। ঝুঁকি নিয়ে দর্শনার্থী বহন করে থাকে বাসগুলো। মূলত এসব প্রাণী দেখতে বা বাচ্চাদের দেখাতে পরিবারসহ আসেন সাফারি পার্কে। কিন্তু প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা এসে হতাশ হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্কে যেমন প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে, তেমনি দেওয়া হচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি। অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে একের পর এক প্রাণীর মৃত্যু, ভেতরে নোংরা, ঘাস বড়সহ গজারিগাছে লতা পেঁচিয়ে অন্ধকার হওয়ার ঘটনা ঘটছে। চলতি বছরের গত ১৬ জানুয়ারি পার্কের দেয়াল টপকে পালিয়ে যায় একটি নীলগাই। এর আগে ২০২১ সালেও একটি নীলগাই পালিয়ে গিয়েছিল। ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর পার্কে একটি সিংহ ও একটি ওয়াইল্ড বিস্ট মারা যায়। ২০২২ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহের মৃত্যু হয়। ২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর মারা যায় একটি জিরাফ। ২০২১ সালে পার্কে তিনটি ক্যাঙারু মারা যাওয়ার পর থেকে ক্যাঙারুশূন্য হয়ে যায় কোর সাফারি। এ ছাড়া লেকগুলো একসময় ব্ল্যাক ও হোয়াইট সোয়ানে পরিপূর্ণ থাকলেও বর্তমানে একটিও নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্কের একজন কর্মচারী জানান, পার্কে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলছে দীর্ঘদিন। পূর্বে পার্কটির বিভিন্ন প্রকল্প ইজারা দিয়েছিলেন। সরকার পতনের পর থেকে তারা পলাতক। প্রবেশগেটে দলবদ্ধভাবে ঘুরতে আসা স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক মানুষ এলে ৩০-৪০ জনের টিকিট কেটে বাকি টিকিটের টাকার হদিস থাকে না। পার্কে সিকিউরিটি, টিকিটম্যানসহ বনের লোকদের যোগসাজশে ভেতরে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখানোর কথা চুক্তি করে গাইড পরিচয় দেওয়া একশ্রেণির দালাল। পার্কে প্রবেশে ফি ছাড়া দর্শনাথীদের প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে মাথাপিছু ফের কাটতে হয় টিকিট। কিন্তু ওই দালালেরা ৯টি স্থান ৪০০ টাকায় ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে চুক্তি করে নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। অথচ ওই ৯টি স্থান ঘুরতে প্রতি দর্শনাথীর গুনতে হতো প্রায় ৮০০ টাকার মতো। এভাবে হচ্ছে রাজস্ব ফাঁকি।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা ফাইজা বলেন, পার্কের মধ্যে অনেক কিছু পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে, হরিণের বেষ্টনীতে খাবার নেই, ঘোড়াটা শুকিয়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে, দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা প্রাণীগুলোর স্বাস্থ্যের বিষয়ে অবহেলা করছেন। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের বসার কোনো জায়গা নেই বা ওয়াকওয়েগুলো ভালো নয়। এটাকে যদি পরিচর্যা ও প্ল্যানিং করা যায়, আরও সুন্দর করে বনায়ন করা যায়, তাহলে হয়তো দর্শনার্থী বাড়বে।

দর্শনার্থী মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, সুন্দর একটা পরিবেশ উপভোগ করার জন্য এখানে আসা। কিন্তু এখানে প্রতিটি প্রাণী দেখেই মনে হচ্ছে অগোছালো অবস্থা রয়েছে। যেভাবে থাকা দরকার সেভাবে নেই। ভেতরে একটি মাত্র বাঘ দেখলাম, তা-ও রোগা হয়ে রয়েছে। অনেক পাখি দেখলাম নেই। খাঁচা আছে, পাখি নেই। অজগর সাপটা যেভাবে রাখা আছে, অজতœ-অবহেলায় পড়ে আছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, কার্প মাছগুলো (রঙিন মাছ) সেখানে পানি ঘোলা হয়ে কতগুলো কচুরি পানা পড়ে রয়েছে। ঢুকতে ৫০ টাকা আবার প্রতিটি দর্শনীয় স্থানে ফের টিকিট কাটতে হচ্ছে। কিন্তু যতটুকু দেখে মনোমুগ্ধ হওয়া উচিত, সেটা নেই।

পার্কের গেটের বাইরে তিন ভাই টাটকা খাবার হোটেলের মালিক আবুল কালাম বলেন, বর্তমানে পার্কে কোনো দর্শনার্থী আসে না বললেই চলে। শুধু শুক্রবার কিছু মানুষ আসে। অন্যান্য দিন মাঝে মাঝে দোকান বন্ধও রাখতে হয়। ব্যবসা একেবারে মন্দা; পরিবার নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। কারণ একবার যারা ঘুরে যায়, তারা আর আসে না এবং পরিচতদের আসতে নিরুৎসাহিত করে। এ কারণে প্রতিদিন কমছে দর্শনার্থী।

দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না, আপনি বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) শারমীন আক্তার স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।

তবে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) শারমীন আক্তারের মুঠোফোন একাধিক দিনে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!