সম্প্রতি পরিচালক আর্থিক সজীবের শুটিং ইউনিট বহনকারী একটি পিকআপ টাঙ্গাইলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উল্টে যায়। এতে লাইটম্যান, জেনারেটরকর্মী ও চালকসহ সাত জন গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনার পরেও পরিচালক ও ‘প্র্যাঙ্ক কিং’-এর মালিক আর্থিক সজীব বা তার টিমের কেউ আহতদের পাশে নেই! লাইটম্যানরা অভিযোগ করেছেন, এত বড় দুর্ঘটনার পরও তিনি শুটিং চালিয়ে গেছেন, আহতদের সঙ্গে দেখা করতে বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেননি।
লাইটম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম শাহরিয়ার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর রাতে প্রোডাকশন হাউজের পক্ষ থেকে লাইটম্যানদের লাইটের সঙ্গে একই পিকআপে উঠতে বলা হয়। কিন্তু সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী লাইটম্যানদের আলাদা গাড়িতে যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কথা। শুরুতে লাইটম্যানরা রাজি না হলেও পরিচালক আর্থিক সজীবের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত তারা পিকআপেই যাত্রা করেন।
ঢাকা থেকে জামালপুরে আর্থিক সজীবের ‘স্কুল গ্যাং’ শুটিং স্পটে যাওয়ার পথে টাঙ্গাইল এলাকায় ৫ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে পিকআপটি উল্টে যায়। এতে পিকআপে থাকা চালকসহ সাত জন আহত হন। দুর্ঘটনায় লাইট, জেনারেটরসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম গাড়ি থেকে পড়ে যায়।
ইব্রাহিম শাহরিয়ার অভিযোগ করে বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হলো পরিচালক আর্থিক সজীবের কাজে লাইটম্যানরা গিয়েছিলেন, তিনি বা তার টিমের কেউ এখন পর্যন্ত খোঁজ নেননি। বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি, মাঝে ধরলেও কল কেটে দেন। পরে আমি হোয়াটসঅ্যাপে পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো সাড়া দেননি।
তিনি আরও বলেন, পরিচালক বলেছেন, তিনি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে দিয়েছেন এবং একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু এগুলো তো পথচারীরাও করে থাকে। এমন বড় দুর্ঘটনার পরও তিনি শুটিং চালিয়ে গেছেন। অন্তত আহতদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল।
ইব্রাহিম আরও অভিযোগ করেন, আমরা যখন তাকে বলেছি, যাতায়াতের জন্য আলাদা গাড়ি দিলে এমন পরিস্থিতি হতো না, তখন তিনি দায় এড়িয়ে বলেছেন ‘ভাই আমি এত কিছু বুঝি না’। একজন পরিচালকের এমন দায়সারা মনোভাব মেনে নেওয়া যায় না। বড় দুর্ঘটনা ঘটার পরও শুটিং চালিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে, তিনি কেবল নিজের কাজকেই প্রাধান্য দিয়েছেন, আহতদের নয়।
আহতদের মধ্যে তিন জন টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে, একজন জামালপুর সদর হাসপাতালে, তিন জন ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে লাইটম্যান রবিন গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। তার একটি হাত কেটে ফেলা হয়েছে, পায়ের অবস্থাও সংকটজনক। শ্যামলী শেফা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন চালক ইব্রাহিমসহ আরও দুজন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন রবিন (২৬), শাহাদত (৩০), আকমল (২৬), হৃদয় (২৪), আসিফ (২২), শান্ত (২৮) ও চালক ইব্রাহিম।
লাইট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমি সেই রাতেই পিকআপে ওঠার ব্যাপারে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু গাড়ির ব্যবস্থা তারা করে দেয়নি। আহত হৃদয়ের পাঁচটি দাঁত ফেলে দিতে হয়েছে, তার চোয়াল ভেঙে গেছে। রবিনের হাত-পা দুটোই ঝুঁকির মুখে। জেনারেটরের কর্মীদেরও মেরুদণ্ড ও ঘাড় ভেঙে গেছে।
এ ঘটনায় লাইটম্যান সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দুর্ঘটনায় দায়িত্বহীনতার জন্য পরিচালকের সমালোচনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে পরিচালক আর্থিক সজীবের সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর অধীনে, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা আহত হওয়া কর্মীদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে নিয়োগকর্তার আইনি দায়িত্ব রয়েছে। ধারা ১৫১ অনুযায়ী, কর্মীর মৃত্যু বা স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হয়। এ ছাড়া শর্তসাপেক্ষে কর্মীর অস্থায়ী অক্ষমতা বা চিকিৎসা খরচও নিয়োগকর্তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এই আইনের অধীনে কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দুর্ঘটনার পর যথাযথ সহায়তা প্রদান নিয়োগ কর্তার মৌলিক দায়িত্ব।
তবে এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে পরিচালক আর্থিক সজীব তার আইনি দায়িত্ব পালন করেননি। দুর্ঘটনার পর আহতদের চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি গাফিলতির করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন