ঢাকার কংক্রিটের ভিড় আর অবিরাম যানজটে ক্লান্ত মনকে একটু স্বস্তি দিতে চাইলে, একদিনের জন্য বেরিয়ে পড়তে পারেন হাওয়া বদলের খোঁজে। মিশে যেতে পারেন প্রকৃতির অপার স্নিগ্ধতায়, সবুজের মায়ায়। ঢাকার আশপাশেই রয়েছে এমন অনেক মনোরম গন্তব্য, যেখানে একদিনের ছোট্ট ভ্রমণেই ফিরে পাবেন প্রশান্তি আর নব উদ্যম। এমনই কিছু ভ্রমণস্থলের সন্ধান দিচ্ছেন আরফান হোসাইন রাফি
সারাহ রিসোর্ট
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় অবস্থিত সারাহ রিসোর্ট দেশের সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোর একটি। প্রায় ২০০ বিঘা জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই রিসোর্টটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার এক মেলবন্ধন। প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বিশাল লেক, তার পাশে সবুজ মাঠ, পাখির ডাক আর রঙিন ফুলের ছড়াছড়ি। সারাহ রিসোর্টের প্রতিটি ভবন পরিকল্পিতভাবে তৈরি, যাতে প্রকৃতির কোনো ক্ষতি না হয়। এখানে রয়েছে রিসোর্ট ভিলা, কটেজ, ওয়াটার লজ, সুইমিং পুল, ফিটনেস সেন্টার, কিডস জোন, এমনকি মিনি চিড়িয়াখানাও। পরিবার, দম্পতি বা করপোরেট অফিসসহ সব ধরনের অতিথির জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা প্যাকেজ। বাচ্চাদের জন্য আছে খেলাধুলার বিশাল জায়গা, আর বড়দের জন্য স্পা, জিম ও সাইক্লিং ট্র্যাক। রাতে রিসোর্টের লেকে আলোর প্রতিফলন এবং মিউজিকের সঙ্গে ফুড কর্নারে বসে চা খাওয়া পর্যটকদের এনে দেয় রোমান্টিক অভিজ্ঞতা। যদি কেউ এক দিনের পূর্ণ বিলাসে হারিয়ে যেতে চান, সারাহ রিসোর্টই হতে পারে সঠিক পছন্দ।
যেভাবে যাবেন : সারাহ রিসোর্টে প্রাইভেট বা পাবলিক বাসে যেতে পারেন। প্রাইভেট গাড়িতে গেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তার দিকে যান এবং রাজাবাড়ী বাস স্টপ থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার সামনে গেলেই রিসোর্টটি খুঁজে পাবেন। আর পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যেতে হলে মহাখালী বা বিমানবন্দর বাস স্টপ থেকে ময়মনসিংহ রোডগামী বাসে উঠুন। বাসটি রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্টের দিকে যাবে। রাজাবাড়ী বাস স্টপে নেমে সিএনজি করে ৩ কিলোমিটার সামনে এগোলেই সারাহ রিসোর্টে পৌঁছাতে পারবেন।
ছুটি রিসোর্ট
গাজীপুরের সুকুন্দি এলাকায় ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের কাছে অবস্থিত ছুটি রিসোর্ট, প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক টুকরো স্বর্গ। প্রায় ৫০ বিঘা জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই রিসোর্টটি যেন আধুনিকতার মাঝেও এক গ্রামীণ চিত্র। ছুটি রিসোর্টের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর ইকো-ফ্রেন্ডলি পরিবেশ। এখানে সিমেন্টের পরিবর্তে কাঠ ও বাঁশের ব্যবহার বেশি; যা একদিকে নান্দনিক, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব। রিসোর্টে থাকার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কটেজ ও তাবু (টেন্ট), যা ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। রাতে তাবুর নিচে আকাশ দেখা, পোকামাকড়ের আওয়াজে ঘুমিয়ে পড়া শহরের মানুষের জন্য সত্যিই এক ব্যতিক্রমী অনুভব। এখানে পর্যটকদের মাছ ধরা এবং সাইকেল চালানোর সুযোগ রয়েছে। এক দিনের ছুটিতে শহরের ক্লান্তি গলিয়ে গ্রামের প্রশান্তিতে মিশে যেতে ঘুরে আসতে পারেন এই রিসোর্ট থেকে।
যেভাবে যাবেন : ছুটি রিসোর্টে যেতে হলে প্রথমে নিজস্ব বা যেকোনো পরিবহন ব্যবহার করে গাজীপুর চৌরাস্তায় আসুন। এরপর গাজীপুর ডিসি অফিসের সামনে (রাজবাড়ী) নেমে সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তিন কিলোমিটার দূরে আমতলী বাজারের কাছে সুকুন্দি গ্রামে গেলে রিসোর্টটি পাবেন।
মাওয়া রিসোর্ট
ঢাকা শহর থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কান্দিপাড়া গ্রামে গড়ে তোলা নিরাপদ ও নির্জন প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরা মাওয়া রিসোর্ট। রিসোর্টটির নান্দনিকতা ও পদ্মার সৌন্দর্য একে অপরের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। তাই এটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। রিসোর্টে প্রবেশ করলেই দেখা মেলে নারিকেল ও সুপারি গাছ দিয়ে ঘেরা একটি সুন্দর দীঘি। এখানে আধুনিক বোটে চড়ে দীঘির শান্ত জলরাশিতে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। দীঘির পাশে রয়েছে একটি ক্যাফেটেরিয়া এবং দীঘির পূর্ব পাড়ে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে ১৮টি আকর্ষণীয় কটেজ। প্রতিটি কটেজে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে রঙিন কাঠের সেতু, যা পুরো রিসোর্টটিকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
যেভাবে যাবেন : মাওয়া রিসোর্টে যাওয়ার জন্য ঢাকার মিরপুর ১০, ফার্মগেট বা শাহবাগ থেকে স্বাধীন পরিবহন, এবং গুলিস্তান থেকে গাংচিল বা ইলিশ পরিবহনের বাসে ৭০ টাকায় সরাসরি লৌহজং থানার মসজিদঘাটে পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় রিসোর্টে যাওয়া যায়। অথবা বিক্রমপুর পরিবহনের বাসে মাওয়া ঘাটে নেমে ৫০০ গজ হেঁটে রিসোর্টে পৌঁছানো সম্ভব। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত গাড়িতে গেলে মাওয়া গোলচত্বর থেকে ডানদিকে কিছু দূর এগিয়ে লৌহজং পুলিশ ফাঁড়ির কাছে পুরোনো ফেরিঘাটের পাশে রিসোর্টে পৌঁছানো যাবে।
হেরিটেজ রিসোর্ট
ঢাকার আশপাশের সবচেয়ে বিলাসবহুল ও
নান্দনিক রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম হেরিটেজ রিসোর্ট। এর অবস্থান ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদীর মাধবদীতে। রিসোর্টটিতে অতিথিদের জন্য রয়েছে আধুনিক কটেজ, ওয়াটার ভিলা, পুল ভিলা, সুইমিং পুল, ওয়েভ বিচ, জিম, স্পা এবং মাল্টি-কুইজিন রেস্টুরেন্ট। বড় পরিসরের অনুষ্ঠানের জন্য
রয়েছে কনভেনশন সেন্টার, কনফারেন্স হল এবং কালচারাল হল। এ ছাড়াও লেকে বোট রাইডিং ও ফিশিংয়ের পাশাপাশি ছোটদের জন্য রয়েছে কিডস জোন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমস ও খেলার মাঠ। তা ছাড়া রিসোর্টের ক্লাব কারে ঘুরে দেখার সুবিধাও আছে। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে আছে পূর্ণিমার রাতে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর মুন সিন কর্নার, যেখান থেকে জোছনার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
যেভাবে যাবেন : নিজস্ব পরিবহন কিংবা ঢাকার
বিভিন্ন এলাকা (মহাখালী, সায়েদাবাদ, কমলাপুর,
গুলিস্তান) থেকে বাস সার্ভিস ব্যবহার করে নরসিংদীতে পৌঁছানো যায়। বনানী থেকে পিপিএল সুপার ও
গুলিস্তান থেকে মেঘালয় লাক্সারি বাসেও সরাসরি রিসোর্টে যাওয়া সম্ভব। রেলপথেও যেতে পারেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ‘এগারসিন্দুর’ বা ‘মহানগর’ ট্রেনে। লোকাল ট্রেনে গেলে ঘোড়াশাল স্টেশনে নেমে বাসে রিসোর্টে যাওয়া সহজ।
অথবা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বা সিলেটগামী বাসেও রিসোর্টের
কাছাকাছি নামা যায়। কাঁচপুর বা টঙ্গী থেকে কালীগঞ্জ
ও ঘোড়াশাল হয়ে নরসিংদী পৌঁছাতে সময় লাগে
মাত্র ১১.৫ ঘণ্টা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন