নির্বাচন আর রোজার কারণে অমর একুশে বইমেলা এবার এগিয়ে আনা হলো ডিসেম্বরে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত বইমেলার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। একাডেমির শহিদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে অমর একুশে বইমেলা ২০২৬-এর তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত সভা হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, একাডেমির সচিব, পরিচালকরা এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে রোজা শুরু হবে। তার আগেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ দুটো বিষয় মাথায় রেখেই বৃহস্পতিবারের সভায় একুশে বইমেলার তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে একাডেমির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ১৯৮৩ সালে এরশাদের সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের কারণে একবার বইমেলা বন্ধ হয়েছিল। এ ছাড়া বইমেলা বন্ধ থাকার নজির নেই। তবে কোভিড মহামারির সময় ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে বইমেলার সময় পরিবর্তন করে মার্চ মাসে নেওয়া হয়েছিল।
যেভাবে শুরু একুশে বইমেলা
১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির ফটকে চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারার প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে সংগতি রেখে একাডেমির ভেতরে ছোট একটি স্টল স্থাপন করে বই বিক্রি করে মুক্তধারা। ১৯৭৭ সালে মুক্তধারার সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেয়, সেই থেকে একুশে বইমেলার সূচনা।
১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। এর পরের বছরই বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি মেলার সঙ্গে যুক্ত হয়। মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় ১৯৮৩ সালে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা করা যায়নি। পরের বছর থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সূচনা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নাম দিয়ে ধারাবাহিকভাবে মেলা পরিচালনা করছে। ২০২১ সাল থেকে মেলার নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে বইমেলা’। মেলা শুরু থেকেই একাডেমি প্রাঙ্গণে হয়ে এলেও ধীরে ধীরে পরিসর বাড়তে থাকায় জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না। পরে একাডেমির সামনের সড়কেও বইমেলার স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
২০১৪ সালে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে বরাদ্দ দেওয়া হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। তবে মেলার মূল মঞ্চ এবং তথ্যকেন্দ্র রাখা হয় একাডেমি প্রাঙ্গণেই। বিগত এক দশক ধরে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে বইমেলা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন