অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরেই গেলেন লালনকন্যা খ্যাত লোকসংগীতের বরেণ্যশিল্পী ফরিদা পারভীন। শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি স্বামী এবং ৪ সন্তান রেখে গেছেন।
পুরো জীবনটাই সংগীতের সঙ্গে কেটেছে কিংবদন্তি এই শিল্পীর। অসুস্থ হওয়ার কয়েক মাস আগে এক সাক্ষাৎকারে ফরিদা পারভীন বলেছিলেন, গানের জন্য আরেকটু বাঁচতে ইচ্ছে করে৷ আরও কিছু সংগীতের জন্য ভালো করার ইচ্ছা জাগে। তারপরও মানুষ তো মরণশীল। দুনিয়ার জীবন অস্থায়ী। সেখানে তবুও আল্লার অশেষ মেহেরবানি যে, এত অসুস্থতার পরও আমি এখনো গান করতে পারি। জীবন থাকলে তো অসুস্থ হবে আবার ভালো হবে। ভালো-মন্দ মিশিয়ে আছি।
সংগীতচর্চাই করছেন জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, একাডেমিক কাজ করছি। ফাউন্ডেশনের আদলে সবকিছু করার চেষ্টা করছি। বাচ্চাদের একডেমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যদি বলেন, তাহলে প্রথম তো স্বপ্ন ছিল অচিনপাখি। আমি যেহেতু লালন সাঁইজির গানেই নিজেকে অবগাহন করেছি, সেখানে আমি চেয়েছি আমার মধ্যে আমার গুরু এবং লালন ফকির বেঁচে থাকবে। আমার বাচ্চাদের গুরু-শিষ্যের যে পরম্পরায় আছি, সাঁইজির তরিকায় সেটি ওদের বোঝানোর জন্য চেষ্টা করেছি পরিপূর্ণ রূপে মানুষ রূপে। শুধু মানুষ রূপের চেহারা নয়, মনুষ্যত্ব নিয়ে যেন তারা জীবনে সমৃদ্ধ লাভ করে এবং এগিয়ে যেতে পারে।
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোর জেলার সিংড়া থানার শাওল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফরিদা পারভীন। জন্ম নাটোরে হলেও বড় হয়েছেন কুষ্টিয়ায়। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে নজরুলসংগীত গাইতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে ১৯৭৩ সালের দিকে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
শিশুদের লালনসংগীত শিক্ষার জন্যে ‘অচিন পাখি স্কুল’ নামে একটি গানের স্কুল গড়ে তুলেছেন ফরিদা পারভীন। দেশবরেণ্য এই শিল্পী গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। তবুও জীবনের শেষ সময়ে সুস্থ হয়ে আরও একবার ফিরতে চেয়েছিলেন গানে। কিন্তু তার আর ফেরা হলো না।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন