বিএনপির মনোনয়ন চূড়ান্তের ক্ষেত্রে বিগত ১৫-২০ বছর ধরে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, দলীয় আনুগত্য, অতীত ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের অগ্রধিকার ও মূল্যায়ন করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করবে বিএনপি।
বিএনপির নয়া পল্টন ও গুলশান অফিসের একাধিক সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে জানায়, সারা দেশে মনোনয়ন চূড়ান্তের জন্য বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে কাজ করছে মনোনয়ন কমিটি। এক্ষেত্রে এলাকায় সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্তদের প্রধান্য দেওয়া হবে। দলীয় আনুগত্য ও জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যারা রাজপথে সক্রিয় ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
দলীয় তথ্যমতে, জুলাই-আগস্টের পর যারা রাজপথে ছিল না বা লোভে পড়ে অপরাধে জড়িয়েছে এবং দলের বদনাম করেছে তাদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিকল্প ভাবতে নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চূড়ান্ত এমপি যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীরাই মনোনয়ন পাবেন। তা ছাড়া যেখানে একই আসনে অনেক প্রার্থী আছে সেখানে যারা সবুজ সংকেতে রয়েছেন তাদের সঙ্গে টেলিফোনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। এক কথায় বলা যায়, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে এবং সাংগঠনিকভাবে যোগ্যদের খোঁজখবর ও জনগণের কাছে যাদের অবস্থান ভালো তাদের দল মূল্যায়ন করা হবে।
সর্বাধিক গ্রহণযোগ্যরাই মনোনয়ন পাবে : নাম প্রকাশ না করতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য রূপালী বাংলাদেশকে জানান, কে কোন এলাকায় বেশি জনপ্রিয়, সেই খোঁজখবরের বিষয়টি মাথায় নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তৃণমূল থেকে শুরু করে অনেকের সঙ্গে কথা বলছেন দলের হাইকমান্ড। তা ছাড়া আমাদের সিনিয়র নেতারা যারা এ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাও এসব বিষয়ে কাজ করছেন। এখানে স্বজনপ্রীতির কোনো সুযোগ নেই। দলের যারা দায়িত্বে রয়েছে তারা যদি স্বজনপ্রীতির চেষ্টা করে তারাও ধরা পড়বে তারেক রহমানের কাছে।
এর কারণ হলো, জুলাই-আগস্টের পর বিএনপির অনেক নেতার কারণে দলের বদনাম হয়েছে; সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ছাড়াও তারেক রহমানের স্পেশাল সোর্স ও একটি বিশেষ টিম কাজ করছে। এ কারণে এবার সাংগঠনিক দক্ষতা ছাড়া কোনো স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এলাকার জনপ্রতিনিধি হওয়া কষ্টকর বলে দাবি করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, একাধিক জরিপের মাধ্যমে দল সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বাছাই করবে। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য নেতাকেই দল মনোনয়ন দেবে। কেউ যদি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোটকথা, সবাইকে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, এক্ষেত্রে দল সাংগঠনিকভাবে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
তারেক রহমানের ফোনকে সবুজ সংকেত বলা হলেও নমিনেশন কনফার্ম না : বিএনপির তৃণমূলের একাধিক নেতা ও বিশেষ টিমের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তারেক রহমান যাদের ফোন দিয়ে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন সেটাকে সবুজ সংকেত বলা হলেও নমিনেশন কনফার্ম না। এটা এক ধরনের এমপি প্রার্থীর ক্ষেত্রে প্রাথমিক চূড়ান্ত বলা যায়।
যেসব আসনে একাধিক প্রার্থী সেক্ষেত্রে দল কী করবে?
এদিকে বিএনপিপন্থি রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিএনপির যেসব আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন সেক্ষেত্রে দল কী করবে, সাধারণ মানুষ এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। বিশ্লেষকদের দাবি- দেশের বেশির ভাগ আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এমন আসনও আছে, যেখানে আত্মীয়স্বজন, যেমন বউমা, বিয়াই, শালা, কোথাও বাবা-ছেলে, অনেক জায়গায় ভাই-বোন আলাদাভাবে গণসংযোগ করছেন। এ অবস্থায় বিবাদ-গ্রুপিং এড়াতে এখনই প্রতি আসনে একক প্রার্থীর মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে নির্বাচনি মাঠে নামাতে চাইছে বিএনপি।
দ্রুত আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে ‘সবুজ সংকেত’ না দিলে অনেক জায়গায় দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা কেন্দ্রকে জানিয়েছে বিএনপির তৃণমূল নেতারা। এতে নড়েচড়ে বসেছে দলটির হাইকমান্ড ও নীতিনির্ধারকরা। তারা তৃণমূলকে ডাকছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। কোথাওবা তারেক রহমান ফোন করে আশ^স্ত করছেন।
যারা এই নির্দেশনা মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে দল থেকে। এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি মাসেই অন্তত ২০০ জনকে সবুজ সংকেত দেওয়া হবে দল থেকে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কোনো একটি পার্টিকুলার এলাকা থেকে দলের এমন একজন ব্যক্তিকেই নমিনেশন দিতে চাইব, যিনি ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছেন। যার সঙ্গে ওই এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে, ওঠাবসা আছে, মানুষের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম।
যার সঙ্গে ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, তরুণ, নারী, মুরুব্বিসহ ছাত্র-ছাত্রী সবার যোগাযোগ আছে। এ ধরনের মানুষকেই আমরা অগ্রাধিকার দেব। তবে জুলাই-আগস্টের পর যারা দলের বদনাম করেছে, তাদের বিকল্প ভাবা হচ্ছে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রূপালী বাংলাদেশের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, বিএনপি পুরোপুরি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। একক প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও নীতিনির্ধারকরা আশা করি খুব কম সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন