পূজার আনন্দ শেষ হতেই অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত আবার ফিরেছিলেন নিজের প্রিয় জায়গায়Ñ শুটিং ফ্লোরে। চলছিল পরিচালক আতিউল ইসলামের সিনেমা ‘বানসারা’-এর শেষ ধাপের কাজ। এতদিন ধরে তিনটি সিডিউলে শুটিং চলেছে পুরুলিয়ার অজপাড়ায়, জঙ্গলের ভেতরে। আর এই শেষ দিনের শুটিংই হয়ে উঠল স্মরণীয়Ñ কারণ এই দিনেই ঘটে গেল এক অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা।
কলকাতার এক পুরোনো গোডাউনে চলছিল সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিং। সবাই জানে, বনি সবসময় নিজের দৃশ্য নিজেই করতে ভালোবাসেন। এই দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ঠিক সেই সময়েই ঘটে গেল বিপদ। টানটান উত্তেজনার অ্যাকশন সিকোয়েন্সে পা পিছলে গিয়ে আহত হন বনি। গোড়ালিতে কেটে যায় মাংসের একটা অংশ, মুহূর্তের মধ্যে রক্তে ভেসে যায় মেঝে। ফ্লোরে উপস্থিত প্রোডাকশনের লোকেরা দৌড়ে আসেন, কেউ নিয়ে আসে অ্যান্টিসেপটিক, কেউ ব্যান্ডেজ। পরিচালক আতিউল ইসলামও ছুটে যান অভিনেতার কাছেÑ থমকে যায় শুটিং। তবুও সামান্য বিশ্রামের পর, পায়ে ব্যথা নিয়েই আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান বনি।
পরিচালক আতিউল ইসলাম বলেন, ‘বনি এখন পুরোপুরি সুস্থ। ওর অসাধারণ পেশাদারিত্ব দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। প্রযোজনা সংস্থা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছিল, তাই কোনো বড় অসুবিধা হয়নি।’
বনির কণ্ঠে ততক্ষণে ভেসে আসছে এক অনবদ্য দৃঢ়তাÑ ‘এই সিনেমার জন্য নিজেকে নতুন করে গড়েছি আমি। দিনের পর দিন চরিত্রের জন্য কাজ করেছি, চুলও ছোটো করে ফেলতে হয়েছে। আমার চরিত্র ‘অজিতেশ’-এর মধ্যে বহু স্তর আছে, যা দর্শকদের অবাক করবে। শেষ দিনের শুটিংয়ে পায়ে চোট পেয়েছিলাম, রক্তে পা লাল হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ভালো চরিত্রের জন্য এই ব্যথা কিছুই না। এখন অনেকটাই ভালো আছি।’ বর্তমানে বিশ্রাম আছেন বনি।
পুরুলিয়ার জঙ্গলে ঘেরা গ্রামের নাম ‘বানসারা’ সিনেমার নামও সেখান থেকেই। গ্রামের এক রহস্যময় দেবী, যাকে গ্রামবাসীরা বনদেবী বলে মানেন, তার জাগ্রত শক্তির ওপর নির্ভর করেই গ্রামের বিচার, শাস্তি ও বিশ্বাস। দেবীর ইচ্ছা ও আদেশ পৌঁছে দেন বড়মাÑ অর্থাৎ জমিদার বাড়ির একমাত্র মেয়ে গৌরীকা দেবী। এই চরিত্রে দেখা যাবে অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্যকে। দেবীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনি গ্রামের ভালো-মন্দের নিয়ন্তা।
এমন এক রহস্যে ঘেরা গ্রামে হঠাৎই প্রবেশ করে পুলিশ অফিসার অজিতেশÑ বনি সেনগুপ্ত। সে কি শুধু তদন্ত করতেই এসেছে, না কি বড়মার অলৌকিক শক্তির কোনো অজানা সত্যি খুঁজে ফিরছে? এই প্রশ্নের উত্তরই দেবে ‘বানসারা’।
শেষ দিনের দুর্ঘটনা যেন সিনেমার গল্পের মতোই আবেগে মেশানো বাস্তব। রক্তে ভেজা পা নিয়েও বনি যেভাবে দৃশ্য শেষ করেছিলেন, তা একেবারে সিনেমার মতোই লড়াইয়ের গল্প। যন্ত্রণা পেরিয়ে হাসিমুখে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোÑ এ যেন এক অভিনেতার নীরব অঙ্গীকার। একটা চরিত্র, একটা বিশ্বাস, একটা গ্রামের মিথ- আর তার মাঝখানে এক বনি সেনগুপ্ত, যিনি প্রমাণ করে দিলেন, সত্যিকারের শিল্পী কখনো থামেন না।
সদ্য মুক্তি পেয়েছে বনির আপকামিং সিনেমা ‘ভানুপ্রিয়া ভূতের হোটেল’-এর মোশন পোস্টার। প্রথমবার উইন্ডোজ প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে কাজ করেছেন। এ ছাড়াও পাইপলাইনে রয়েছে আরও কয়েকটি নতুন সিনেমা।
এদিকে, বছর আসে বছর যায়। প্রতি বছর বনি সেনগুপ্ত আর কৌশানী মুখোপাধ্যায়ের বিয়ে নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়। ২০২৫ প্রায় শেষের পথে। দীপাবলির রাতে একই বিষয় নিয়ে ফের কথা তুলেছিলেন অভিনেতা যুগলের কাছের বন্ধু রাহুল মজুমদার। কৌশানীর বাড়ির পূজায় সস্ত্রীক এসেছিলেন তিনি। সেখানেই বন্ধুর আবদার, এবার বিয়ে করতেই হবে বনি-কৌশানীকে। তবে এবারও এড়িয়ে গেলেন তারা। বনির মা পিয়া সেনগুপ্তর কথায়, তার ছেলে এবং হবু বৌমা মনে করবেন, তারা থিতু হবেন, সে দিনই তিনি চার হাত এক করবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন