*** পাউবোর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন অকেজো জায়গায় বছরের পর বছর জীবনযাপন
*** বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার আহ্বান রাজনীতিবিদ ও স্থানীয়দের
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ সংলগ্ন অকেজো জায়গায় বছরের পর বছর ধরে জীবনযাপন করছে শত শত ভূমিহীন পরিবার। জীবনের শেষ অবলম্বন হিসেবে এই জায়গাগুলোই তাদের ঘরবাড়ি, তাদের বেঁচে থাকার আশ্রয়। কিন্তু সম্প্রতি পাউবোর উচ্ছেদ নোটিশ ও মাইকিং শুনে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে এক অমানিশার ঘন অন্ধকার। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ হাজারো মানুষ।
মেরিন একাডেমির পাশে বসবাসরত মোহাম্মদ নবী হোসেন কান্নাজনিত কণ্ঠে জানান, আমাদের যদি উচ্ছেদ করে দেওয়া হয় তাহলে কোথায় যাব আমাদের থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। সন্তান-সন্ততি, স্ত্রীকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচেই থাকতে হবে।
এই আর্তনাদ শুধু নবী হোসেনের নয়, এটি শত শত পরিবারের হাহাকার। যেখানে দিনের পর দিন শ্রমজীবী মানুষগুলো অর্ধাহারে অনাহারে থেকেও মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছিল, আজ সেই জায়গাটুকু হারানোর ভয়ে তারা অস্থির।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পরিবারগুলো ইতোমধ্যেই একাধিক মানববন্ধন করেছে এবং প্রশাসনের কাছে দরখাস্ত জমা দিয়েছে উচ্ছেদ স্থগিত করার অনুরোধে। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে তারা প্রতিদিন অজানা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। শিশুদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকেই কাজ ছেড়ে দিচ্ছে শুধু মাথার ওপর ছাদ থাকবে কিনা এই শঙ্কায়।
আনোয়ারার সচেতন মহল বলছেন, শুধু এই বেড়িবাঁধের জায়গা নয়, পারকী সাপমারা খাল থেকে শুরু করে হাইলধর পর্যন্ত পাউবোর অসংখ্য জায়গা অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। আনোয়ারায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪৫ একর জায়গা রয়েছে সেখানে কোনো উচ্ছেদ অভিযান হয় না। তাহলে কেন শুধু গরিব মানুষের মাথার ওপরই এমন নির্মম আঘাত নেমে আসছে? এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে কিনা তা খতিয়ে দেখার আহ্বান।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলাপ করেছি। অনুরোধ করেছি যেন কোনো পরিবারকে রাতারাতি উচ্ছেদ না করা হয়। প্রথমে তাদের বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, বহু বছর ধরে পাউবোর অকেজো জায়গায় জীবন গড়েছে এসব পরিবার। এখন হঠাৎ করে উচ্ছেদ করা হলে ভেঙে পড়বে শত শত মানুষের স্বপ্ন, ধ্বংস হবে শিশুদের ভবিষ্যৎ। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বাস্তবসম্মত এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহিদ বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে আইনি প্রক্রিয়া চলতেছে তবে এর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গার সীমানা নির্ধারণ করা হচ্ছে। বসতিগড়া ভূমিহীন গরিব মানুষদের কথাও চিন্তায় রয়েছে বলে জানান।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন