- ৩০টি আশ্রয়ণ ঘরের মধ্যে ২৪টিতেই মানুষ থাকে না
- প্রকৃত ভূমিহীন নয়, বরং সচ্ছলদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে
- খালি ঘরে মাদকের আড্ডা ও অনৈতিক কার্যকলাপ
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর আছে, কিন্তু সে ঘরে মানুষ নেই। স্থানীয়দের দাবি, সংশ্লিষ্টরা সে সময় ঘর বিতরণে অনিয়ম করে সচ্ছল ব্যক্তিদের মাঝে ঘরগুলোর বেশির ভাগ দিয়েছিলেন। তাদের বসতভিটা, ঘর আছে। সে কারণে এখন তারা সরকারের বরাদ্দকৃত আশ্রয়ণের ঘরে থাকেন না। ঘরের মালিকদের অনেকেই অন্যের কাছে ঘর বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার অনেকেই ঘর তালাবদ্ধ করে দখলে রেখে বিক্রির চেষ্টা করছেন। ফলে শূন্য পড়ে আছে উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নের নিমাইমারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর আশি ভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ডাংধরা ইউনিয়নের নিমাইমারী আশ্রয়ণ প্রকল্পটিতে ৩০টি ঘর নির্মিত হয়। সাধারণত ভূমিহীন মানুষের আবাসন সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে ঘরগুলো নির্মিত হয়। সে কারণে প্রতিটি ঘর বরাদ্দের সময় দুই শতক খাসজমি ঘর মালিকের নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয় ডাংধরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন পরিবারকে। ঘর বরাদ্দের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। তারা ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন পরিবারের ন্যায্যতার ভিত্তিতে ঘরগুলো বরাদ্দের জন্য সুপারিশ করবেন কর্তৃপক্ষের কাছে।
স্থানীয়দের দাবি, শর্তসাপেক্ষে ঘর বিতরণের কথা থাকলেও উপকারভোগী নির্বাচনে অনিয়ম করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন পরিবারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘর বিতরণে স্বজনপ্রীতি ও বিশেষ ক্ষেত্রে অর্থের লেনদেন করে মোটামুটি সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে কারণে তারা ঘর বরাদ্দ নিলেও ঘরে থাকছেন না। অনেকেই নিজের নামে বরাদ্দকৃত ঘর বিক্রি করছেন। আবার অনেকে অন্যত্র থেকে শুধু ঘর দখলে রাখার জন্য ঘরে অন্য জনকে থাকতে দিয়েছেন।
সরেজমিন গত বুধবার আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ৩০টি ঘরের মধ্যে মাত্র ৬টি ঘরে মানুষ বসবাস করছে। সেখানেও দুজন ঘরের মালিক নন। তারা ঘর মালিকের আত্মীয়। ঘর মালিক ঢাকায় থাকায় ঘরের দখল ধরে রাখতে তাদের ঘরে থাকতে দিয়েছেন। বাকি ২৪টি ঘরে তালা দেওয়া।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন থেকে ঘরগুলো তালাবদ্ধ, কোনো মানুষ থাকে না। আঙিনায় আগাছা জন্মেছে। চারদিকে শুনশান নীরবতা আর এ সূযোগে এলাকার অনেক বখাটে সেখানে মাদকের আড্ডা বসানোসহ অনৈতিক কার্যকলাপের সুযোগ নিচ্ছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক সারির ৬ ঘরে থাকছেন ডাংধরা ইউনিয়নের বিন্দুরচরের রাশেদা বেগম, হাসিনা বেগম ও জমিলা বেগম, সোনাকুড়া পূর্বপাড়া গ্রামের কাজলী বেগম, কাউনিয়ার চরের সামছুন্নাহার ও নিমাইমারী গ্রামের কমলা বেগম বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে জমিলা বেগম ঘরের মালিক নন। তিনি তার নাতনি অমেলার ঘরে বসবাস করছেন। তিনি জানান, তার বসতভিটা ঘর নেই। সে সময় তাকে ঘর দেওয়া হয়নি।
ডাংধরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান বলেন, ঘরগুলো আমার সময়ে বরাদ্দ হয়নি। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশির ভাগ ঘরগুলোতে লোক বসবাস করে না সেটা জেনেছি। অনেকে ঘর পেয়েও থাকছেন না, তাহলে তো তাদের ঘরের প্রয়োজন নেই। ফাঁকা ঘরগুলো পুনরায় প্রকৃত আশ্রয়হীন মানুষদের বরাদ্দ দিলে ভালো হতো, তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, ভূমিহীন, অতিদরিদ্র, আশ্রয়হীন পরিবারের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো বিতরণ হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যতিক্রম হয়ে থাকে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন