উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন মৌসুমের শুরুতেই ইতিহাসের পাতায় নাম তুললেন মোহাম্মদ সালাহ ও হ্যারি কেইন। এর জন্য মিসরীয় তারকা সালাহ সময় নেন মাত্র ৬ মিনিট। আর ইংলিশ তারকা কেইন সময় নিয়েছেন ৬৩ মিনিট। বুধবার দিবাগত রাতে ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে চ্যাম্পিয়নস লিগে নতুন মৌসুমে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লিভারপুল ৩-২ গোলে হারায় আতলেতিকো মাদ্রিদকে। এই ম্যাচে মাত্র ছয় মিনিটের মধ্যে গোল করানোর পাশাপাশি নিজেও গোল করেন লিভারপুলের ফরোয়ার্ড সালাহ। আর তাতেই ইতিহাসের পাতায় নাম উঠে যায় তার। সালাহ চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে কোনো ইংলিশ ক্লাবের হয়ে ম্যাচের প্রথম ৬ মিনিটের মধ্যে গোল করার পাশাপাশি গোল করালেন। যেকোনো ক্লাবের হিসাবে এই তালিকায় সালাহ তৃতীয়। এর আগে মারিয়ানো বোমবার্দা ও করিম বেনজেমা প্রথম ছয় মিনিটের মধ্যে গোল করার পাশাপাশি গোল করিয়েছেন।
চ্যাম্পিয়নস লিগ ক্যারিয়ারে এটি সালাহর ৪৮তম গোলের রেকর্ড। এ প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ১২তম স্থানে উঠে এলেন তিনি। সালাহর জন্য রাতটি ছিল ঐতিহাসিক ও বিশেষভাবে স্মরণীয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার তালিকায় স্টিভেন জেরার্ডকে (৭৩) পেছনে ফেলেছেন এই তারকা। ৭৪ ম্যাচ খেলা সালাহর সামনে শুধু জেমি ক্যারাঘার। চলতি বছর প্রিমিয়ার লিগ থেকে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সরাসরি ২৫ গোলে অবদান রাখলেন সালাহ। নিজে ১৭ গোল করার পাশাপাশি ৮টি গোল করিয়েছেন।
অন্যদিকে, আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্য ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখের স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন মাঠে আলো ছড়ালেন। চেলসির বিপক্ষে বায়ার্ন মিউনিখের ৩-১ ব্যবধানে জয়ে ম্যাচে জোড়া গোল করেন এই ইংলিশ তারকা। ২৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোলের পর ৬৩ মিনিটে আরও একটি গোল করেন। এতে চ্যাম্পিয়নস লিগে ইংলিশ খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোলে অবদান এখন শুধু কেইনের (৫৩)।
৫৮ ম্যাচে ৪২ গোল করার পাশাপাশি ১১ গোল করিয়েছেন। এই তালিকায় ডেভিড বেকহামকে পেছনে ফেললেন কেইন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও নেইমারের পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে দুটি আলাদা ক্লাবের হয়ে ন্যূনতম ২০টি করে গোল করলেন টটেনহাম থেকে বায়ার্নে যোগ দেওয়া কেইন। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ছয় ম্যাচে ১০ গোল করার পাশাপাশি ৩টি গোলও বানিয়েছেন কেইন। স্মরণীয় ম্যাচ খেলার পর কেইন জানান, ‘খুব ভালো একটি দলের বিপক্ষে উঁচু মানের পারফরম্যান্স ছিল। আমরা ক্লাব বিশ^কাপজয়ীদের বিপক্ষে খেলছি, ম্যাচের আগে আমরা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলে নিয়েছি। শুরু থেকেই আমাদের ভালো খেলতে হতো এবং সেটা পেরেছি।’
এদিকে, ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার অভিযানটা দুর্দান্ত হয়েছে পিএসজির। আতালান্তার ওপর প্রায় পুরোটা সময় আধিপত্য করে বড় জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়ল কোচ লুইস এনরিকের দল। ঘরের মাঠে ৪-০ গোলে জিতেছে গত মৌসুমে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা দলটি। অধিনায়ক মার্কিনিয়োস দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর প্রথমার্ধেই ব্যবধান বাড়ান খাভিচা কাভারাৎস্খেলিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে অন্য দুটি গোল করেন নুনো মেন্দেস ও রামোস।
ঘরোয়া লিগে টানা চারটি ম্যাচ জেতা পিএসজি ইউরোপ-সেরার মঞ্চে নেমে তৃতীয় মিনিটেই গোল উদ্্যাপন করে। ফাবিয়ান রুইসের পাস পেয়ে খুব কাছ থেকে গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্কিনিয়োস। এগিয়ে যাওয়ার পর একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে তারা। তাতে একরকম কোণঠাসা হয়ে পড়ে আতালান্তা। প্রায় ৭০ শতাংশ সময় পজেশন রেখে প্রথম ২০ মিনিটেই ৯টি শট নেয় পিএসজি, এর পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। এরপর পিএসজি আক্রমণের ধার কিছুটা কমে আসে। তবে সেই সুযোগ নিতে পারেনি আতালান্তা। উল্টো ৩৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে স্বাগতিকেরা।
আশরাফ হাকিমির পাস ধরে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শটে গোলটি করেন জর্জিয়ান ফরোয়ার্ড কাভারাৎস্খেলিয়া। তিন মিনিটের মধ্যে তৃতীয় গোলও পেতে পারত পিএসজি। মার্কিনিয়োস ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু সুবর্ণ সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি তিন দিন আগে লিগ আঁর ম্যাচে জোড়া গোল করা ব্রাডলি বার্কোলা, তার স্পট কিক আটকে দেন গোলরক্ষক মার্কো কার্নেসেচ্চি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরেকটি গোল করে জয়ের পথে এগিয়ে যায় পিএসজি। বার্কোলার পাস ধরে দুরূহ কোণ থেকে ঠিকানা খুঁজে নেন পর্তুগিজ ডিফেন্ডার মেন্দেস। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ডি-বক্সের মধ্যে থেকে বাঁ পায়ের শটে আতালান্তার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড রামোস।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন