একদিকে কোম্পানির হারিয়ে ফেলা টাকার জন্য অব্যাহত চাপ, অন্যদিকে নিজের আর্থিক দৈন্য ও পরিবারের নানা টানাপড়েন। এসব থেকে উত্তরণের কোনো পথ খুঁজে না পাওয়ার আক্ষেপ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে অঝোরে কান্না করছিলেন তিনি। এরপর সবার কাছে ক্ষমাও চান তিনি। এ ঘটনার পর চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মিঠুন দাস (৩৫) নামের হতাশাগ্রস্ত এক যুবক। এর আড়াই ঘণ্টা পর অদূরে রেললাইন থেকে তার ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকু- পৌর সদরের মৌলভীপাড়া এলাকায় রেললাইন থেকে মিঠুন দাস নামের ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার হয়। এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাশের একটি মন্দির এলাকা থেকে লাইভে যুক্ত হন তিনি।
পুলিশ জানায়, নিহত মিঠুন দাস রাজশাহী জেলার প্রেমানন্দ দাসের ছেলে। তবে তার পরিবার কুমিল্লায় বসবাস করে। একটি মালবাহী ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
মিঠুন দাসের ফেসবুক আইডি ‘এম কে মিঠুন’ নামে। লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘কোনো দিন ভাবিনি আমি এ সিদ্ধান্ত নেব। এর আগে সিদ্ধান্ত নিলে এত বড় ক্ষতিটা হতো না। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’
গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে বিপত্তি কাটছে না জানিয়ে মিঠুন বলেন, ‘আমি কোম্পানির তিন লাখ টাকার মতো হারিয়ে ফেলেছি। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। আমি জানি, আমার পরিবারকে দেখার কেউ নেই; কিন্তু এই মুখ আমি মা-বাবাকে কীভাবে দেখাব। আমি চলে যাচ্ছি। যারা আমার কাছ থেকে টাকা পান, ক্ষমা করে দিয়েন। আমি আমার নিজের থেকে পরিবারটাকে শেষ হতে দেখতে পারি না।’
ফেসবুক লাইভে তার পরিবারকে ঋণমুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে সহায়তা চান মিঠুন। এ সময় তিনি বলেন, ‘না ভালো স্বামী হতে পারলাম, না ভালো সন্তান। না ভালো ভাই হতে পারলাম। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।’
ফেসবুকে এ লাইভ ভিডিওর মন্তব্যের ঘরে অনেকেই তাকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। কেউ কেউ অনুরোধ করেন মোবাইল ফোনে কল রিসিভ করার। ফেসবুকে লাইভের পরও দুটি পোস্ট দেন মিঠুন। সেখানেও তিনি টাকা হারিয়ে ফেলার বিষয়টি উল্লেখ করে ক্ষমা চান।
দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সীতাকু- রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশরাফ সিদ্দিকী। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) লাইভ করার পর মালবাহী ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছেন তিনি। তারা রেললাইনের পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন। নিহত ওই যুবকের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরিবার অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন