ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ক্লিন ইমেজের দুই শতাধিক নেতাকে নির্বাচনি প্রস্তুতির জন্য গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। ৫০টির মতো আসনে প্রার্থী যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সমমনা দল ও জোটকে আসন ছাড় দেওয়ার পর চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষ হলে পর্যায়ক্রমে ৩০০ প্রার্থীকেই এ সবুজ সংকেত দেওয়া হবে। বিএনপির দলীয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর খোঁজে এরই মধ্যে একাধিক মাঠ জরিপের ফল এবং দলের নীতিনির্ধারণী নেতাদের মতামত ও তৃণমূলে জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রার্থী তালিকা অনেকটাই চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, ওই তালিকা ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্ভাব্য প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দিচ্ছেন। তাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যেসব এলাকায় কোন্দল আছে, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিভাজন আছে, তারেক রহমান সেসব এলাকার প্রার্থীদের স্কাইপে সংযুক্ত করে দলের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন। দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করতে বলছেন। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করলে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দিচ্ছেন। প্রকাশ্য বক্তৃতায়ও তিনি দলের ঐক্য ধরে রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন গত কিছুদিন ধরে।
ঢাকার বাইরে যারা সবুজ সংকেত পেলেন
উত্তরাঞ্চলের আসনগুলোর মধ্যে পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিনের ছেলে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, পঞ্চগড়-২ আসনে ফরহাদ হোসেন আজাদ, কুড়িগ্রাম-৩ আসনে তাসভীরুল ইসলাম, পাবনা-২ আসনে একেএম সেলিম রেজা হাবিব, পাবনা-৩ আসনে হাসান জাফির তুহিন, পাবনা-৪ আসনে হাবিবুর রহমান হাবিবকে এলাকায় নির্বাচনি কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কয়েকটি আসনের বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত চারজনের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর বাইরেও কয়েকটি আসেন প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে শামসুজ্জামান দুদু, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মাহমুদ হাসান খান, ঝিনাইদহ-৪ আসনে সাইফুল ইসলাম ফিরোজকে প্রার্থিতার কথা জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত একজন দলের সবুজ সংকেত পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
দক্ষিণাঞ্চলের সংসদীয় আসনের মধ্যে যশোর-৩ আসনে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা-৩ আসনে রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আসনে আজিজুল বারী হেলাল, পটুয়াখালী-৪ এবিএম মোশারফ হোসেন, ভোলা-২ আসনে হাফিজ ইব্রাহীম, ভোলা-৩ আসনে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, ভোলা-৪ আসনে নুরুল ইসলাম নয়ন, বরিশাল-১ আসনে জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-৩ আসনে জয়নুল আবেদীন ও বরিশাল-৪ আসনে রাজীব আহসান দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন। তারা দলের প্রার্থিতা এবং এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া ফরিদপুর-৪ আসনে শহীদুল ইসলাম বাবুল, জামালপুর-১ আসনে রশিদুজ্জামান মিল্লাত, টাঙ্গাইল-৫ আসনে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, জামালপুর-৩ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল এবং ময়মনসিংহ-৪ আসনে ওহাব আকন্দের নাম জানা গেছে।
সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জ-১ আসনে মাহবুবুর রহমানকে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনি কাজ শুরু করার জন্য বলা হয়েছে।
দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আসনের বেশির ভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির বেশির ভাগ সদস্য, দলের মহাসচিবসহ আরও অনেক নেতা রয়েছেন। এবার অনেক এলাকায় তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এর মধ্যে ছাত্রদলের প্রতিশ্রুতিশীল একাধিক নেতা থাকতে পারেন। এদের মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ফজলুর রহমান খোকন, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েলের মধ্য থেকে একাধিকজনের ভাগ্য খুলতে পারে বলে বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানিয়েছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন তারেক রহমান
তারেক রহমান প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার পাশাপাশি যেসব এলাকায় একাধিক প্রভাবশালী প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি মনোনয়ন পাওয়া নেতার পক্ষে কাজ করার জন্য সবাইকে তাগিদ দিচ্ছেন। দলের নির্দেশনা অমান্য করা হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে।
বরিশাল-৫ আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন তারেক রহমান। সেখানে সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরীন, নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহসহ আরও কয়েকজন প্রার্থী হতে চান।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের সবাইকে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। নির্বাচনে সবাইকে দলের চূড়ান্ত প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করতে হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন